অনলাইন ডেস্কঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি স্থাপনের চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে সংসদের ভোটে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে চায় ইসি। সম্প্রতি বিশিষ্টজন ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের প্রেক্ষাপটে ইসি এই মত প্রকাশ করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান।
এ ছাড়া নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ রোধ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ ফল নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নেবে বলে মত জানিয়েছে ইসি। এমনকি আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে সিসিটিভি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশের শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করে। ওই সংলাপে বিশিষ্টজন ইসিকে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। নির্বাচন কমিশন স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে তাদের মতামত দিয়ে গণমাধ্যমকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে। এ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সংলাপের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের মতামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে ইসি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবে। সকল রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে অচিরেই সংলাপে ডাকা হবে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ রোধ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ ফল নিশ্চিত করতে ইসি সব ব্যবস্থা নেবে। কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে অনুমোদিত সাংবাদিকদের এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।
স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে কেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়ে কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে এবং আরও পর্যালোচনা করে কমিশন আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসির তথ্য অনুযায়ী স্টেকহোল্ডারদের উপস্থাপিত মতামত, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সব দল, বিশেষত প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন অবাধ হতে হবে; নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে; নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ রোধ করে শুদ্ধ ও নিরপেক্ষ ফল নিশ্চিত করতে হবে; ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে; ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে অনুমোদিত সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে; ভোট গ্রহণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ দিতে হবে; নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে, তা দৃশ্যমান হতে হবে; রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তা বাদ দিয়ে বা তাদের পাশাপাশি যতদূর সম্ভব কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া সমীচীন; ভোটাধিকার স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করতে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা হলে নির্বাচন একাধিক দিনে কয়েকটি ভাগে করা যেতে পারে; ইভিএমের শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করা না গেলে ইভিএমের ব্যবহার পরিহার করে কাগজি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে দেশবাসীর কাছে আস্থাভাজন হতে হবে।