তৌফিকুর রহমান তাহের দিরাই-শাল্লা প্রতিনিধি:
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের সেবিকা ও চিকিৎসক কর্তৃক মরণোত্তর দেহ দানকারী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কমরেড অমরচাঁদ দাসের উপর শারিরীক নির্যাতনের প্রতিবাদে শাল্লায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ২৯ মার্চ শুক্রবার বেলা ১১টায় উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা পালন করা হয়।
প্রতিবাদ সভায় মুক্তিযোদ্ধা অধীর রঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ও শাল্লা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত সেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার। অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী শাল্লা শাখার সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস, খেলাঘর আসরের সভাপতি শিক্ষক কাননবালা সরকার, মুক্তিযোদ্ধা বলরাম দাস, সুধীর রঞ্জন দাস, অনিল চন্দ্র দাস, বাহাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মহীতোষ দাস, উদীচীর সাংগঠনিক সম্পাদক জ্যোতির্ময় চৌধুরী, প্রতাপপুর সপ্রাবি’র প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার দাস, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শাল্লা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস রঞ্জন তালুকদার, উদীচীর উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক শর্বরী মজুমদার, বাউলশিল্পী হারুন মিয়া প্রমুখ।
বক্তারা বলেন অমরচাঁদ দাস একজন ত্যাগী পরোপকারী মানুষ। তিনি সারাজীবন মানুষের সেবা করেছেন নানাভাবে। মানুষের সেবার জন্যই লোকটি সংসার করেননি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা দিয়েছেন অমরচাঁদ দাস। তাঁর নিজের দেহ, চক্ষু দান করেছেন ওই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই। কর্তৃপক্ষ অমরচাঁদ দাসের এই ত্যাগের জন্য তাকে সংবর্ধনাও দিয়েছে। আবার তারাই তাকে নির্যাতনও করেছে। এমন একজন মানুষের উপর যদি তারা হামলা করতে পারে-তাতলে হাসপাতালে সেবাপ্রাপ্তি সাধারণ মানুষকে তারা কী করতে পারবে স্পষ্টি তা বুঝা যায়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল যে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে চলছে তা খুবই দুঃখজনক। অমরচাঁদ দাসের মোবাইল ফোনের সব নাম্বার তারা ডিলিট করে দিয়েছে। আমরা এই অমানবিক নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিমনা, গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের নানা পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানা যায় গত ১৩মার্চ হার্নিয়া রোগের সমস্যা নিয়ে তিনি ওসমানীতে ভর্তি হন। ১৬মার্চ তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৭মার্চ থেকে প্রস্রাব সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন সেবিকারা তাকে কোনো সহযোগিতা করছিল না। মনে কষ্ট নিয়ে সেবিকাদের সাথে নাতনী সম্বোধন করে একটু মানবিক হতে বলেছিলেন। তাতেই ক্ষেপে উঠে চিকিৎসক সেবিকারা। পুলিশ নিয়ে এসে শাসান তাকে। পরে ১৫জনের মতো দল সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল তারা। তারই প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। তারাই ধারাবাহিকতায় শাল্লায়ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলো। উল্লেখ্য, অমরচাঁদ দাসের বাড়ি দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামে।