দেশের অন্যতম একটি চেইন সুপার শপ স্বপ্নের ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে প্রায় ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হ্যাকার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
শনিবার (০৭ আগস্ট) রাতে দেশে ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে ডিএমপি’র সিটি-সাইবার ক্রাইম (সিটিসিসি) ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সদস্যরা ৩ হ্যাকারকে আটক করে।
ডিএমপি’র সহকারি পুলিশ কমিশনার চাতক চাকমা গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, গত ৩ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৮, ২৩, ৩৪, ৩৫ ধারায় একটি মামলা (মামলা নং-৭) দায়ের করে সুপার শপ স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই ডিএমপি’র সিটিসিসি ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন অভিযান পরিচালনা করে শনিবার রাতে নওগাঁ থেকে মোঃ নাসিমুল ইসলাম (২৩), গাইবান্ধা থেকে রেহানুর হাসান রাশেদ (২২) এবং রাইসুল ইসলাম (২৫) ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত ৬ টি মোবাইল সেট, ২ টি ল্যাপটপ ও ১টি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ অর্থ, ইলেকট্রনিক কার্ড ও স্বপ্ন ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
এই পুলিশ সদস্য আরো জানান, তাদেরকে আটক করার পর আজ রবিবার (৮ আগস্ট) দশ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ সিএমএম আদালতে প্রেরণ করা হয়। তবে বিজ্ঞ আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও এই মামলায় গ্রেফতারকৃতদের সহযোগীদের গ্রেফতারে লক্ষ্যে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানা যায়, স্বপ্ন নামের এই সুপার শপটি সারাদেশের ১৮২টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকে। সে কারণের এডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল তাদের ডিজিটাল সিস্টেমটি। এরপরেও এই সুরক্ষা সিস্টেমকে ব্রিচ করে চলতি বছরের মধ্যে গত ২৬ জুন থেকে ৯ জুলাই মধ্যে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করা হয়।
বিষয়টি সুপার শপ কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা ডিএমপি’র সিটিসিসির কাছে অভিযোগ জানানো হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা সুপার শপটির ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স এনালাইসিস সহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট সনাক্ত করে । এই অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে অভিযান পরিচালনা করেই ওই ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত ৬ টি মোবাইল সেট, ২ টি ল্যাপটপ ও ১টি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ অর্থ, ইলেকট্রনিক কার্ড ও স্বপ্ন ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় হ্যাকার গ্রুপের সদস্য। হ্যাকার গ্রুপটি স্বপ্ন’র ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার কয়েকটি ই-কমার্স ইউজারদের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫% ছাড়ে বিক্রি করে বিপুল অংকের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। হাতিয়ে নেয়া অর্থ তারা বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্টে জমা করে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ আরো জানায়, ইতোপূর্বে হ্যাকার গ্রুপের এই সদস্যরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট যেমন ফ্রিল্যান্সার ডট কমসহ বাংলাদেশী বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম সিকিউরিটি ব্রিচ করে ‘বাউন্টি’ দাবি করে।
এছাড়াও এই হ্যাকার গ্রুপটি প্রথমসারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। এমনকি এই হ্যাকারদের কাছে সরকারী-বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগ ইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করে বলেও তথ্য প্রদান করে।
এই বিষয়ে স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, এই অপরাধীচক্র আমাদের সুনাম নষ্ট করার প্রচেষ্টায় এই কাজ করছে। ডিজিটাল ভাউচার জালিয়াতি করে বিক্রিসহ গত মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বপ্নের নামে ভুয়া অফারও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় আমরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের করি এবং সাইবার ক্রাইম টিমের সহযোগিতা চাইলে পুলিশের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সেটা আমলে নিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করেন।