মোঃ আবদুল আউয়াল সরকারঃ মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান মাস।
রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস রমজান। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক নেয়ামত স্বরূপ বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এই মাহে রমজান। শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের রোজা। এ মাসেই মানুষ রোজা পালন ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনে মশগুল থাকবে।
মুসলিম উম্মাহ দৈনন্দিন জীবনের আত্মকেন্দ্রীক যাবতীয় গুণাবলী অর্জন ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে দিনের বেলায় মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন এবং রাতে নামাজ ও আল্লাহ স্মরণে নিয়োজিত থাকে।
রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও আত্মিকভাবে পূতঃপবিত্র হয়ে ওঠে। তাই রমজানে মুসলিম উম্মাহকে চারিত্রিক ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস পাওয়ার আশায় দুই মাস আগে অর্থাৎ রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং এভাবে দোয়া করতেন যে, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।’
রমজান মাস যেহেতু মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত বরকত এবং নাজাতের মাস। তাই রমাজনের আগেই দুনিয়ার যাবতীয় খারাবি থেকে নিজেকে তথা সমাজকে মুক্ত রাখা; রহমত বরকত মাগফেরাত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা একান্ত জরুরি।
যারা ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে সবার জন্য সহনশীল হওয়াও জরুরি। কেননা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের রমজানের দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করা রোজাদারের হক নষ্ট করার শামিল। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যখন রমজান সমাগত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে কোমর বেঁধে লেগে যেতেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা ও ইবাদত-বন্দেগি করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য পরিপূর্ণ তাওফিক দান করুন। আমিন। রোজা রাখলে আমাদের শরীরের সঞ্চিত দুষিত বস্তু বের হয়ে যায় ও শক্তি ক্ষয় হয়ে চর্বি ভাঙতে থাকে। পবিত্র মাহে রমজানে জীবনযাপনে বেশ পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে খাবারদাবারের পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। রমজানের ফজিলত বা উপকারিতা বহুবিধ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাস্থ্য। অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে স্বাস্থ্যের বেশ উপকার হয়।
রমজানে এবাদতের মতো একটি সুকর্ম সম্পন্ন করতে হয়, যার প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। সারা বছর ধরে শরীরে জমে যাওয়া মেদ বা চর্বি ভেঙে যায়। অর্থাৎ শরীরে জমে যাওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো মলমূত্র, ঘাম প্রভৃতির সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে চর্বি কমে যায়, ফলে কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। কয়েক দিন রোজা পালনের পর রক্তে এনডোরফিনসের মতো কয়েকটি হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যে হরমোন মানুষকে অধিক সক্রিয় করে এবং শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।
সাহরির পর থেকে ইফতার পর্যন্ত উপোস থাকলেও প্রকৃতপক্ষে রোজার স্বাস্থ্যসম্পর্কিত কার্যকারিতা শুরু হয় সাহরির আট ঘণ্টা পর থেকে। কারণ সাহরির পর আট ঘণ্টা পর্যন্ত ওই খাবার হজম হতে থাকে ও তা থেকে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। আট ঘণ্টা পর সাহরির প্রভাব সরাসরি থাকে না। তখন থেকে লিভার ও মাংসপেশিতে আগের জমে থাকা গ্ল–কোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। গ্লুকোজ শেষ হয়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। এসব প্রক্রিয়াই শরীরের জন্য খুব উপকারী, যা রোজার মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব। তবে না খেয়ে থাকাটা যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি হয়, তাহলে মাংসপেশি শুকাতে পারে। সে প্রক্রিয়া কিন্তু শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
রমজানে তারাবি ও নফল নামাজের উপকারিতা অনেক। আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভ ছাড়াও শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং মনে প্রশান্তি আনতে তারাবি নামাজ বিশেষ সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক তিন কিলোমিটার হাঁটা বা দৌড়ানোর সমান পরিশ্রম হয় তারাবি নামাজ পড়লে। অন্যান্য নামাজের মতো তারাবিও দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যালরি বার্ন তথা শক্তিক্ষয় করে। ক্ষুধার উদ্রেক করে ও মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে। তাই রমজানে নিয়মিত তারাবি নামাজ পড়া ও অন্তত ফজরের নামাজ শেষে কয়েক রাকাত নফল আদায় অশেষ সওয়াবের পাশাপাশি মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যদি রোজা পালন করা যায়, তাহলে শারীরিক নানা ধরনের উপকার পাওয়া যাবে। বলা হয়ে থাকে, রমজান সুস্বাস্থ্য চর্চার মাস। এছাড়া রোজা হতে পারে আমাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, মানসিক সুস্থতা, সম্প্রীতি-সাম্যের মনোভাব, মানবতার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কর্মশালা আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখকঃ চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।