অনলাইন ডেস্কঃ সম্প্রতি সুন্দরবনের কয়েকটি পয়েন্টে বনের রাজা বাঘের দেখা পেয়েছেন বনকর্মী ও পর্যটকরা। কটকা, কচিখালীসহ বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্রের আশপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশকিছু রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে।
বনজীবী ও বনরক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছরেও এভাবে বনে বাঘের চলাচল দেখা যায়নি। তবে বাঘের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১২ মার্চ) ঢাকা থেকে সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন একদল পর্যটক। তারা বাঘের দেখা পেয়েছেন একেবারে কাছ থেকে। তাদের বহনকারী পর্যটকবাহী লঞ্চটিতে ছিলেন ৩০ জন পর্যটক। লঞ্চটি কটকা ও কচিখালির মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছালে দেখা মেলে চারটি মতান্তরে পাঁচটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। বনে রাজত্ব করা প্রাণীটিকে কাছ থেকে দেখে বিস্ময়ে হৈ-চৈ শুরু করেন পর্যটকরা।
সোহরাব হোসেন নামে এক পর্যটক জানান, ১২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সুন্দরবন থেকে খুলনা ফেরার পথে ছিটে কটকা এলাকায় তাদের সামনে থাকা আরেকটি লঞ্চের পর্যটকরা নদীর চরে বাঘ দেখতে পান।
“এরপর আমরাও চরের দিকে খেয়াল রাখি। আমরা একসঙ্গে পাঁচটি বাঘকে নদীর চরে গোল গাছের পাশে দেখতে পাই। বাঘগুলো বসে খেলা করছিল।”
লঞ্চের মাস্টার শামিম বলেন, “সুন্দরবনে বহুবার এসেছি। কিন্তু কখনোই বাঘের দেখা পাইনি। এই প্রথম সুন্দরবনে বাঘ দেখলাম। তাও আবার একসঙ্গে পাঁচটি।”
তবে এই পর্যটকদলের আগেও বন কর্মকর্তারা সুন্দরবনে বাঘ দেখেছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় একসঙ্গে তিনটি বাঘের দেখা পান বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ট্যুর অপারেটর সুন্দরবন হলিডেজ’র ট্যুর গাইড শাহ ইলিয়াস বলেন, “১২ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে ছিটা কটকায় খালের পাড়ে চারটি বাঘ দেখতে পাই। সেখানে কোনো বাচ্চা ছিল না। সবগুলো বড় আকারের বাঘ।”
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সাবেক সভাপতি নিয়াজ আব্দুর রহমান বলেন, “এবারই প্রথম বাঘের দেখা পেলাম।”
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কটকা এলাকায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে ৩টি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যরা। এই টিমে ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেন, “আমাদের টহল দল সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে একসঙ্গে মা ও দুটি বাচ্চাসহ মোট তিনটি বাঘ দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তাদের দেখেছিলাম। এ নিয়ে সুন্দরবনে আমি সরাসরি ৪ বার বাঘ দেখতে পেলাম। তাই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।”
তিনি বলেন, “গত ১৬ ফেব্রুয়ারিও আমাদের কর্মকর্তারা বনে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। যা সুন্দরবনের বন কর্মীদের নিয়মিত টহল ও স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের নিরলস পরিশ্রমের ফল।”
১৯৮২ সালের জরিপে সুন্দরবনে ৪৫৩টি বাঘের সন্ধান মেলে। ২০১৮ সালের জরিপে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১১৪টিতে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাঘ গণনার ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৫৩টি। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন বিভাগ যৌথ শুমারি অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪০টিতে। ২০১৩ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা হয় ১০৬টি। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে ১১৪টি বাঘের খোঁজ পান বিশেষজ্ঞরা।