অনলাইন ডেস্কঃ
এক বছরের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় ১১ শতাংশ বেড়ে গেছে। এমন তথ্য জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। শনিবার (২১ জানুয়ারি) পণ্য ও সেবার মূল্যবিষয়ক প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানানো হয়।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকায় গত বছর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি খাদ্য-বহির্ভূত খাতে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল। খাদ্যে এটি ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।
ক্যাব বলছে, মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে চাল, আটা, ডাল, বেকারি পণ্য এবং চিনি। এছাড়া এ সময় মাছ, ডিম, দেশি মুরগি, ভোজ্যতেল, আমদানিকৃত ফল, চা/কফি, স্থানীয় এবং আমদানিকৃত দুধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী এবং পরিবহন খরচ অতিমাত্রায় বেড়েছে।
উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর গড় মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা ‘সাধারণ’ পরিবারের তুলনায় কম। নিম্নআয়ের মানুষের ক্ষেত্রে বার্ষিক খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সাধারণ’ মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। মে মাসে কিছুটা কমার পর তা আবার জুন থেকে বাড়তে শুরু করে।
মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি জানুয়ারির তুলনায় ৭ দশমিক ২৯ শতাংশে পৌঁছেছিল। এরপর জুনে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুই অংকে পৌঁছে হয় ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ওই মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। জুলাই মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
মূলত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর হঠাৎ করে আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় বলে জানান বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, পরবর্তী ২ মাস বৃদ্ধির পর ডিসেম্বরে তা কিছুটা কমে আসে।
ক্যাবের তথ্য মতে, প্রধানত মৌসুমি সবজির সহজলভ্যতা, আমন ধানের বাম্পার ফলন এবং মাছ-মাংসের দাম কমে যাওয়ায় ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে। বছরের শুরু থেকে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি দেখা গেছে।
ক্যাব ঢাকা মেগাসিটি (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) জুড়ে ১১টি বাজার থেকে মাসিক দামের তথ্য সংগ্রহ করে। দৈনিক দাম পর্যবেক্ষণে ১৪১টি খাদ্য সামগ্রী, ৪৯টি খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি পরিসেবা অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল প্রকাশ করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে ক্যাবের পক্ষ থেকে।
সুপারিশে ক্যাব জানায়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করতে সরকারের শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো উচিত। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্তভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য ওএমএস স্কিমকে শক্তিশালী করা দরকার। দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য, খাদ্য-বহির্ভূত মৌলিক পণ্য এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে নগদ হস্তান্তর কর্মসূচি বাড়ানো উচিত।