মোংলায় লোডশেডিংয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা, বেচাকেনা নেমে গেছে অর্ধেকে

আরো খুলনা পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
মোংলায় প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ বারের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। যখন তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ায় কারখানা ও দোকানের মালামাল নষ্টের পাশাপাশাশি কমে গেছে বেচা-কেনাও। আর সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ে পড়াশুনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর ১২ টায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে টানা এক ঘন্টা পর দুপুর ১টায়। এভাবেই দুপুর, দুপুরের পর, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাতে ও ভোরে একাধারে চলছে লোডশেডিং। এক ঘন্টা, পৌনে এক ঘন্টা, আধা ঘন্টা করে ৩/৪ বার হচ্ছে লোডশেডিং। এতে চরম ক্ষতি ও ভোগান্তীতে পড়েছেন স্থানীয় কলকারখানা মালিক, ঘোষ ডেয়ারী, হোটেল-মোটেল, মুদি ও খাবারসহ বিভিন্ন দোকানীরা। মালামাল নষ্টসহ বেচা-কেনা কমে গেছে ব্যবসায়ীদের। লোডশেডিংয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে ভূতুরে অবস্থা। তারপরও বিদ্যুৎ না থাকায় লোকজনও আসছেন কেনাকাটা করতে। গরমে দোকানে বসে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দোকানী ও কারখানা সংশ্লিষ্টরা। লোডশেডিংয়ের সময় কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থায় লাইটের ব্যবস্থাও করলেও তাতে ব্যয়ও বাড়ছে তাদের।
পৌর শহরের শেখ আঃ হাই সড়কে ভ্যারাইটিস পণ্যের দোকানী মোঃ জালাল হোসেন বলেন, দিনেই তিন চার বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে দোকানের ফ্রিজে থাকা বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হচ্ছে। অন্ধকারে দোকানের থাকের মাল নামানো যায়না, আর কাস্টমারেরাও আসেন না। তারওরও গরম রয়েছেই। বেচা কেনা অনেক কমে গেছে। সুতা, ব্যাগ ও খেলনা পণ্যের দোকানী মোঃ বুলবুল বলেন, লোডশেডিং দিলে দোকান অন্ধকার হয়ে যায়। নিজেরাও বসা যায়না, ক্রেতারাও ঢুকেন না। আইপিএস লাগিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছি। বেচা-কেনা করতে গিয়ে খরচ ও কষ্ট বেশি হয়ে যাচ্ছে। বরিশাল বেকারীর মালিক মোঃ সোহেল বলেন, লোডশেডিং নিয়ে বড় বিপদে আছি, কারখানার কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। কারণ ঘোষণা ছাড়া যখন তখন লোডশেডিং দেয়ায় কারখানার ওভেন, ট্রে, সাচে তৈরির বিস্কুট, রুটি ও কেকসহ নানা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সার ও কীটনাশক দোকানী মোঃ আবুল হোসেন খান বলেন, লোডশেডিংয়ে ৩/৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এমনিতেই প্রচন্ড তাপমাত্রা গরমে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। দোকানের বেচা কেনা অর্ধেকে নেমে গেছে। কারণ বিদ্যুৎ না থাকলে অন্ধকার ও গরমে লোকজন আসেনা, আবার ৮টায় দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। ভীষণ সমস্যায় আছি যা বলে শেষ করা যাবেনা। সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারী মালিক উত্তম কুমার বলেন, লোডশেডিংয়ে ফ্রিজ ও ফ্যান চালাতে না পারায় গরমে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার নষ্ট হচ্ছে। কোন কাস্টমার লোডশেডিং চলাকালে দোকানে আসেনা। বিভিন্ন কাঁচামালও নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনারও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। এছাড়া বাড়ীঘরে রান্নাবান্নাসহ নানা ধরণের সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়তই। শেহলাবুনিয়ার দীনেশ সাহা, নিলিমা বিশ্বাস ও মাদ্রাসা রোডের তরুন চন্দ বলেন, সন্ধ্যায় লোডশেডিং হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার ভিশন ক্ষতি হচ্ছে। সামনে স্কুলে পরীক্ষা, এভাবে চলতে থাকলে লেখাপড়ার বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে।
কলেজ মোড়ের বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ে শুধু বাড়ীতে পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছেনা। স্কুলেও গরম ক্লাস করতে পারছেনা শিশু-কিশোরেরা। এতে তারা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে ভালভাবে লেখাপড়া করবে কিভাবে। এ দিকে পূর্ব থেকে কোন ধরণের ঘোষণা ছাড়াই যখন তখন লোডশেডিং না দেয়া ও সন্ধ্যা ৮ টায় দোকান বন্ধের সময় আরো বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে স্থানীয় পিডিবি কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন দুই ঘন্টার লোডশেডিং দেয়ার ঘোষণা দিলেও মুলত তা মানা হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। পিডিবির মোংলার আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, এখানে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের চাহিদার বিপরতীতে সরবরাহ রয়েছে ৩০ মেগাওয়াট, ঘাঠতি থাকছে ১৫ মেগাওয়াট। তারপরও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দিনে-রাতে দুইবার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ৩/৪ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোডশেডিং দুইবার আর বাকী সময় বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে হচ্ছে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.