মোংলা সংবাদদাতাঃ
মোংলায় একটি চিংড়ি ঘের থেকে সপ্তাহখানেক ধরে গ্যাস বের হচ্ছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বহু লোকজন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আনন্দ ও কৌতুল থাকলেও রয়েছে দুর্ঘটনার ভীতিও। এদিকে ঘের মালিক সেই গ্যাস দিয়ে কয়েকদিন ধরে রান্নাবান্নার কাজও করছেন। উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিঠাখালীর পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার শেখের (৩৫) পৌনে তিন বিঘার চিংড়ি ঘেরের মাটির নিচ থেকে এ প্রাকৃতিক গ্যাস বের হচ্ছে। ঘেরটির ৪টি জায়গা থেকে উঠছে এ গ্যাস। সপ্তাহখানেক আগে গ্যাসের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পাইপ লাগিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করছেন দেলোয়ারের পরিবার। দেলোয়ার বলেন, ঘেরের জমিতে ৬ বছর আগে মাটি উত্তোলনের জন্য মিনি ড্রেজারের পাইপ বসাতে গিয়েছিলাম। তখনই সেখান থেকে হঠাৎ গ্যাস বের হতে শুরু করে। সেই সময়ে পাইপে মাটি, পানি ও বালি প্রচণ্ড বেগে ও বিকট শব্দে বের হতে থাকে। ভয়ে আমরা তখন ৬০ ফুট গভীরে ঢুকানো পাইপ তুলে ফেলি। তারপর থেকে এভাবে গ্যাস উঠতে থাকে। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে বেশি বের হতে থাকে। এরপর এ গ্যাস কাজে লাগানোর জন্য বাজারের মোবাইল দোকানদার বাদশা মোড়লকে দিয়ে ড্রাম ও পাইপ দিয়ে গ্যাসের লাইন টেনে চুলায় রান্নার কাজ করছি।
দেলোয়ারের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন মিম বলেন, তিনদিন ধরে এই গ্যাস দিয়ে চুলায় রান্নাবান্না করছি। সিলিন্ডার গ্যাসের যেমন প্রেসার এ গ্যাসেও চুলায় প্রায় একই রকম প্রেসার। এ গ্যাস দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভাত, মাছ, ডাল ও সবজি রান্না করছি। বহু লোকজন প্রতিদিন দেখতে আসছে এ গ্যাস দিয়ে তাদেরকে চা খাওয়াচ্ছি। মিঠাখালী বাজারের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান তান্ত্রিক টেলিকমের মালিক মোঃ বাদশা মোড়ল (৩৩) বলেন, দেলোয়ার এসে আমাকে তার ঘের থেকে গ্যাস উঠার কথা জানিয়ে কিভাবে এর ব্যবহার করা যায় তার ব্যবস্থার জন্য বলেন। পরে আমি গত সোমবার তার ঘেরের মধ্যে প্লাস্টিকের ৫০ লিটারের একটি ড্রাম বসিয়ে ও ১ ইঞ্চির পাইপ লাগিয়ে চুলায় সংযোগের ব্যবস্থা করে দিই। এর আগে পাইপের মুখে দিয়াশলাই দিয়ে দেখি আগুন জ্বলে কি না। দিয়াশলাই দিতেই তাতে আগুন জ্বলে। সেই সংযোগ দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে তার ঘরে পুরো রান্নার কাজ চলছে। তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ, বিদ্যৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মোংলার আহবায়ক মোঃ নুর আলম শেখ জানান, মাটির নীচের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ। জনগণের গ্যাস সম্পদ উত্তোলন-সংরক্ষণ ও বিতরণ করে দেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। সরকারের কাছে গ্যাস অনুসন্ধানের দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করণীয় প্রদান করে এলাকার মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটানোর দাবি জানাচ্ছি। মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি বাপেক্সকে জানানো হবে। তারা কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা এসে গবেষণা করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।