ফলো আপ:
রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) থেকেঃ বরিশালের উজিরপুরে চাঞ্চল্যকর ৮ বছরের শিশু দীপ্ত মন্ডল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। দীপ্তর পাষাণী মা ও তার পরকীয়া প্রেমিকসহ গ্রেফতারকৃত ৪ আসামী আদালতে হত্যাকান্ডের আদ্যেপান্ত খুলে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
১ জুন বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতের বিচারক মোঃ মাহফুজুর আলমের কাছে তারা হত্যার ঘটনায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন । পরকীয়া প্রেমিক সেলুন কর্মচারী নয়ন শীলের (৩৫) সঙ্গে নিজ মাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার কারণে মায়ের চোখের সামনে তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী দীপ্ত মন্ডলের (৮) ঘাড় ভেঙে ও গলা টিপে হত্যা করা হয় ।
হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম ও হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ছক আঁকেন সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস (৩০) ও তার স্ত্রী ইভা বিশ্বাস (২৮)। তারা মরদেহটি ড্রামের মধ্যে লুকিয়ে অটোগাড়িতে করে নিয়ে বস্তায় ভরে হারতা বাজার সংলগ্ন খালে ফেলে দেয়। আর ছেলে নিখোঁজের নাটক সাজায় দীপ্তর পাষানী মা সীমা মন্ডল (২৬)। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে বুধবার (১ জুন) দুপুরে বরিশাল সিনিয়র চীফ জুড়িসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷
চঞ্চল্যকার দীপ্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মা সীমা মন্ডল (২৬),তার পরকীয়া প্রেমিক ঘাতক সেলুন কর্মচারি নয়ন শীল (৩৫),সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ইভা বিশ্বাস ।
এর আগে ৩১ মে রাতে স্কুলছাত্র দীপ্ত মন্ডল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা দিপক মন্ডল বাদী হয়ে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক নয়ন শীল ও মা সীমা মন্ডলসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই সীমা মন্ডলকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার অতুল চন্দ্র শীলের ছেলে নয়ন শীল বরিশালের উজিরপুরের হারতা বাজারে রতন বিশ্বাসের সেলুনে কাজ করার সুবাদে হারতা ইউনিয়নের কাজীবাড়ী এলাকার দিনমজুর দিপক মন্ডলের সঙ্গে সুসর্ম্পক তৈরি করেন। এক পর্যায়ে দীপকের সুন্দরী স্ত্রী সীমা মন্ডলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নয়ন শীল।
ঘটনার দিন শুক্রবার (২৭ মে) হারতা মাছ বাজারের পাশে মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বার্ষিক র্কীত্তন দেখতে যান সীমা মন্ডল (২৬) ও তার ছেলে দীপ্ত মন্ডল (৯)। রাতে র্কীত্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে হাজির হন নয়ন শীল। এক পর্যায়ে প্রেমিকা সীমা মন্ডলকে তার দোকান ঘর সেলুনের মধ্যে নিয়ে অনৈাতিক কাণ্ড ঘটানোর সময় রাত প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে শিশু দীপ্ত সেলুনের মধ্যে ঢুকে মায়ের সঙ্গে পর পুরুষের অনৈতিক কাজের দৃশ্য দেখে ফেলে। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় দীপ্তর জীবনে।
সব কথা তার বাবাকে বলে দেবে এ ভয়ে তার মা সীমা মন্ডলের চোখের সামনে ঘাতক নয়ন শীল শিশু দীপ্ত মন্ডলের ঘাড় মটকে ভেঙে ফেলে ও গলা টিপে হত্যা করে। পরে দীপ্তর মা সীমা মন্ডল পরকীয়া প্রেমিক নয়ন শীলকে রক্ষা করতে নিজ বাড়িতে এসে ছেলে নিখোঁজের নাটক সাজান।
ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে ২৮মে তার পিতা দীপক মন্ডল বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। নিখোঁজের পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিন্দ্রনাথ বড়াল ও কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈসহ স্থানীয় লোকজন দিপক মন্ডলের ধর্ম ভাই হারতা বন্দরে সেলুনের কর্মচারী নয়ন শীলকে সন্দেহের তালিকায় রাখে।
৩০মে গভীর রাতে নয়ন তার রক্তমাখা সেলুনের দোকানের ফ্লোর ধৌত করার সময় তাকে হাতেনাতে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। এসময় নয়নের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সেলুনের মালিক রতন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী ইভা মল্লিক (৩৫)কে পুলিশ আটক করে।
আটককৃতরা পুলিশ ও স্থানীয়দের জানান, শিশু দীপ্তকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে ৩দিন সেলুনের ভিতরে বাথরুমে ফেলে রেখেছিল। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় ৩০ মে দুপুর দেড়টায় বস্তাবন্দি লাশ মাছের ড্রামে ভরে রতন বিশ্বাসের ভাই ভ্যানচালক জীবন বিশ্বাসকে নিয়ে ইভা মল্লিক, নয়ন শীল ও রতন বিশ্বাস মিলে হারতা বাজার সংলগ্ন খালে ফেলে দেয়।
এরই সুত্র ধরে ভোর সোয়া ৫টায় উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা খাল থেকে দীপ্তর বস্তা বন্দি লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে শিশু হত্যার খবর পেয়ে ৩১ মে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ শাহ্ জাহান ও উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আর্শাদ।
অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনের জন্য পুলিশের একধিক টিম মাঠে নামলে এ ঘটনায় দীপ্তর মা সিমা মন্ডল জড়িত বলে প্রমাণ পায় পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার (৩১ মে) রাতে তাকে পুলিশি হেফাজতে নিলে তিনি চোখের সামনে ছেলে হত্যার ঘটনা খুলে বলেন।
এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) আলী আর্শাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর দীপ্ত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক। দীপ্তর মা সীমা মন্ডল সরাসরি হত্যান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৪ জন আদালতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।