কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামরী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানি গ্রামে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিস্কুট খেয়ে এক যুবকের মুত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানি গ্রামের আছর উদ্দিনের ছেলে সাইদুল ইসলাম(২৮) ৪ জুলাই সোমবার দুপুরের দিকে নিজ বাড়ি থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে ঐ গ্রামের আনোয়ারের দোকান থেকে ‘স্টার লাইন’ কোম্পানির ১০ টাকা দামের ২ প্যাকেট ‘সল্টেড’ বিস্কুট ও কোক খাওয়ার উদ্দেশ্যে সঙ্গে নিয়ে তার সহযোগী রিপন ও জাহাঙ্গীর আলম শিলখুড়ি ইউনিয়নের কাঠগির গ্রামের চাকলি বিলে মাছ ধরতে যায়।
তার সহযোগী আঃ মজিদ বলেন, আমি মাছ ধরার জন্য চাকলি বিলে ধানের কুড়া দেওয়া শেষ করে গাছের নিচে বিলের পাড়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আসি। এসে দেখি সাইদুল সল্টেড নামক বিস্কুটটি খাইতেছে। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তার বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। ব্যথা অনুভবের সময় সাইদুলের পানির পিপাসা লাগায় সে নিজেই বিলে নেমে ডুব দিয়ে পানি খায়। পানি খাওয়ার পর কিছুক্ষণ তার ভালো লাগে। অতঃপর তার আনুমানিক ১০ মিনিট পর আবার তীব্র ব্যথা অনুভব করে। পরে জাহাঙ্গীর এগিয়ে আসে ও তার অবস্তা আরও খারাপ হলে তার মামা মোতালেব হোসেনকে আমরা ডেকে নিয়ে আসি। তার মামা আসার পূর্বেই আমার কোলে সাইদুল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
তার সহযোগীরা আরও বলেন, সাইদুল মারা যাওয়ার সময় তার চোখ উল্টে সাদা হয় ও তার মুখ দিয়ে গোল্লা পরে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ঘটনাস্থলে চিল্লাচিল্লি শুনে ভারতীয় এক মহিলা বিএসএফ সেখানে এসে অবস্থার অবনতি দেখে সে নিজে তাকে পানি খাওয়ায় এবং তাকে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলে সে চলে যায়। এ ঘটনায় সহযোগীরা বিএসএফ আসা অস্বীকার করে।
ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) বিস্কুট খাওয়ার বিষয়টিতে গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সন্দেহ হলে গণমাধ্যম কর্মী আনোয়ারের দোকানে গিয়ে ‘স্টার লাইন’ কোম্পানির ১০ টাকা দামের ‘সল্টেড’ বিস্কুটটি দেখতে চায়। বিস্কুট নিয়ে তারা দেখেন যে বিস্কুটটি মেয়াদ ৯ জুন ২০২২ তারিখে শেষ হয়েছে। ঐ দোকানে আরও মেয়াদ উত্তীর্ণ ৩৯টি মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাকেট বিস্কুট দেখতে পায়। মেয়াদ উত্তীর্ণ ‘সল্টেড’ বিস্কুট সাইদুল ও তার সহযোগীরা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আনোয়ার দোকানদার স্বীকার করে বলেন, এই বিস্কুট গুলো ১৫-২০ দিন আগে ডিলার থেকে দিয়ে য়ায়।
পরে ‘স্টার লাইন’ কোম্পানির ভ‚রুঙ্গামারীর ডিলার বজলুর রহমান বইজু বলেন, আমি এই কোম্পানির ডিলারশিপ ৪ মাস হয় নিয়েছি। আমার কোম্পানির ডিপো ২ মাস পূর্বে আগুনে পুড়ে গেছে। তারপর থেকে আমি ঐ কোম্পানির কোন পন্য নেই না। আমার কাছে ঐ কোম্পানির সল্টেড সহ কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ পন্য আছে। কোম্পানির ডিপো না থাকায় আমি পণ্য ফেরত দিতে পারি নাই এবং এই পন্য গুলো আমি বিক্রি করি না।
কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই দোকানদার সব সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ জিনিস বিক্রি করে আসছেন । এলাকাবাসী ভোক্তা অধিকার ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বলেন, মারা যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনে মৃত সাইদুলের বাড়ি যাই, যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সার্কেল এএসপি ও যায়। পরে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে জানতে পারি মৃত সাইদুল ইসলামের বাবাও স্টক করে মারা গেছে ও সাইদুলের লাশের গায়েও কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি। মৃতদেহ দেখে স্বাভাবিক মৃত্য মনে হওয়ায় লাশ দাফনের অনুমতি দিয়ে আসি। পরে জানতে পারি যে, মেয়াদ উত্তীর্ণ বিস্কিট খাওয়ায় তার মৃত্যু হয় ! তিনি আরো বলেন ,ভোক্তা অধিকার দিয়ে তাকে ধরিয়ে দিতে হবে।