মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধিঃ
বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মধ্যে তারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। নিম্নমানের তার ব্যবহার করলে যেকোনো মুহুর্তে শর্ট সার্কিট থেকে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তার ইন্সুলেশন সমৃদ্ধ না হলে তা গলেও যেতে পারে এবং বিদ্যুৎ বিলও বেশি আসতে পারে। তাছাড়া শহরের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে সিঙ্গেল ফেজ লাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ধরনের বৈদ্যুতিক লাইনে নিম্নমানের তার ব্যবহার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের স্পর্শকাতর পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন যাচাই-বাছাই ও প্রর্যলোচনা। কিন্তু সবধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিম্নমানের সব কাঁচামাল ব্যবহার করে, সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছামতো তার উৎপাদন করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে “করতোয়া কেবলস্ নামের এমন এক বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেখান থেকে প্রতিদিন রাজধানীর নবাবপুর ও বিভিন্ন জেলায় তার সরবরাহ করা হয়। করতোয়া কেবলস’র মালিক লুৎফর রহমানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন এই কারখানায় ৮০ থেকে ১০০ কয়েল তার উৎপাদন করা যায়। সচরাচর ১৪/৭৬ ও ২৩/৭৬ তার বেশি তৈরী হয় যা ৬শ থেকে ৯শ টাকায় পাইকারি বিক্রি করেন তারা। এই তার বাজারে খুচরা বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫শ টাকায়। ঢাকা রজনীবোস লেন ও পুরান ঢাকার ভাঙ্গাড়ি সহ অন্যান্য লোকাল মার্কেট থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি। মোড়কের গায়ে বাংলাদেশ ইলেক্টিক্যাল মার্চেন্ডাইস মেনুফেকচারারস এসোসিয়েশনের লগো থাকলেও কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। তবে বিএসটিআই অনুমোদন সহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র কমপ্লিট আছে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ক্যাবলের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হলেও নিম্নমানের ক্যাবলের কারণে জনজীবন হুমকিতে পড়েছে। বৈদ্যুতিক ক্যাবল তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় তামা, এলুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিক। তামা অথবা এলুমিনিয়ামের তারের ওপর প্লাস্টিক ইন্সুলেশন করে তৈরি করা হয় ক্যাবলস্ বা তার। কপারের স্থায়িত্ব এবং প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব সমান করতে হলে তারের জন্য বিশেষ মানের প্লাস্টিক কাঁচামাল ব্যবহার করতে হয়। নাহলে আগেই ইন্সুলেশন নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি তার ব্যবহার করার কারণে শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকান্ডে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলছেন, সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে করতোয়া ক্যাবলস্ এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামালের পরিমাণ, আমদানি শুল্ক এবং দরদাম পর্যবেক্ষণ না করার কারনে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর মো: নাদির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্যের কারণেই যত অগ্নিকান্ড ঘটছে। তিনি জানান, গত ১৩ মার্চ শেরপুরের রামচন্দ্রপুর পাড়ায় “ওয়ান টু নাইনটি নাইন” নামক দোকানে অগ্নিকান্ডে দোকান সহ পুরো বাড়ি বস্মীভূত হয়ে যায়। ওই অগ্নিকান্ড শর্টসার্কিট থেকেই ঘটেছিলো বলে জানান তিনি ও দোকানের মালিক অশোক সরকার।
শেরপুর বাসস্ট্যান্ড মোসার্স ভাই ভাই ইলেক্ট্রনিক এর সাফায়াত হোসেন শাফলু জানান, আমরা লোকাল কোনো তার বিক্রি করিনা। তবে কিছু কিছু দোকানে পাওয়া যাওয়ার কারণ হলো, এক কয়েল ১৪/৭৬ বিআরবি তারের দাম ১৯শ টাকা। অন্যদিকে লোকাল এই ধরনের কোম্পানির তার ৬শ থেকে ৯শ টাকায় পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, লোকাল তারগুলো জাল নোটের মতো, দাম একই তবে মান ভিন্ন। এক কয়েল লোকাল তার বিক্রি করলে সারাদিনের খরচ উঠে যায়। সাধারণত ভাম্যমান ব্যবসায়ীরা শেরপুরে এই লোকাল তারগুলো সরবরাহ করে থাকে।
এ বিষয়ে বগুড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারি পরিচালক ইফতেখার রিজভি বলেন, সরকারি অনুমোদনহীন এবং পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সেইটা অবশ্যই আইনত অপরাধ এবং এই বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করব। এ বিষয়ে বগুড়া বিএসটিআই থেকে ফিল্ড অফিসার (সিএম) জুনায়েদ আহম্মেদ জানান, করতোয়া কেবলস্ এর নমুনা আমরা যেইটা পেয়েছিলাম সেই অনুযায়ী মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখব।