আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী। ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ বিশ্বাস করেন বর্তমানে দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা নেই।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর মহাখালীর মেডোনা টাওয়ারে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সমসাময়িক বাংলাদেশে যুব সমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) যৌথভাবে ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক এ জরিপটি পরিচালনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা দেশ থেকে মোট পাঁচ হাজার ৬০৯ জন তরুণ-তরুণী এই জরিপে অংশ নেয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। বিওয়াইএলসি প্রতি ৫ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৮টি বিভাগে সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসনসহ নানা বিষয় নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। জরিপের ফলাফলে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ—উভয়ই সমানভাবে উঠে এসেছে।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আরও জানা যায়, জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন। ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ মনে করেন শিক্ষকের মান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
জরিপে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে, ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থাকে এবং ৪০ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ-তরুণী চাকরির অনিশ্চয়তাকে নিজেদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উঠে এসেছে।
জরিপে তরুণদের চোখে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি (৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ)। এছাড়াও ২৯ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার হ্রাস পাচ্ছে, যা সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
দেশের ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বিদেশে স্থায়ী হতে চায়। ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ দক্ষতা অনুযায়ী চাকরির অভাবে এবং ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সীমিত সুযোগের জন্যে দেশ ছাড়তে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিওয়াইএলসি’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ইজাজ আহমেদ বলেন, ‘তরুণদের শুধু ভবিষ্যতের কাণ্ডারী হিসেবে দেখলেই চলবে না, বরং এখন থেকেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী কাজে যুক্ত করতে হবে। তরুণদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বচর্চা করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে।’
সিপিজের পরিচালক (গবেষণা) ড. এম সানজীব হোসেন বলেন, ‘আমি তরুণদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। এদেশের তরুণদের মধ্যে যে আশার শিখা আমি দেখতে পেয়েছি, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এখন এটা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব আমাদের রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিওয়াইএলসি’র নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ ও গবেষণা সহযোগী তাসনিয়া খন্দকার।