প্রাইজবন্ডের কোটি কোটি টাকার পুরস্কার তামাদি হয়ে যাচ্ছে। লটারিতে পুরস্কার পাওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে দাবি আসছে না। প্রতিবছর ঘটছে এ রকম ঘটনা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক হিসাবে বলা হয়েছে, গত সাড়ে তিন বছরে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো দাবি আসেনি। ফলে সরকার এ টাকা বিতরণ করতে পারেনি। লটারির তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের টাকার দাবি করার নিয়ম রয়েছে।
গতকাল শনিবার প্রাইজবন্ডের লটারির ফলাফল অনুসন্ধানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের তৈরি ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকার প্রাইজবন্ড বিক্রি করে জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এটি যে কোনো সময় ভাঙানো যায়। প্রতিটি প্রাইজবন্ডের মূল্য ১০০ টাকা। এর বিপরীতে সরাসরি কোনো লভ্যাংশ নেই। বন্ডের ক্রেতাদের লটারির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা। প্রতি লটারিতে প্রত্যেক সিরিজ থেকে একটি করে মোট ৬৭টি প্রাইজবন্ড প্রথম পুরস্কার পেয়ে থাকে। দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি সিরিজ থেকে একটি করে পুরস্কার দেওয়া হয়। তৃতীয় পুরস্কার এক লাখ টাকা। প্রতিটি সিরিজ থেকে দুটি করে প্রাইজবন্ড এ পুরস্কার পায়। চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা, যার প্রতি সিরিজ থেকে দুটি করে পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি সিরিজ থেকে ৪০টি করে প্রাইজবন্ড পুরস্কার পায়। প্রতি তিন মাস পরপর লটারি হয় প্রাইজবন্ডের। একটি লটারিতে সব সিরিজে মোট ৩ হাজার ৮২টি প্রাইজবন্ড পুরস্কার পেয়ে থাকে। প্রতি লটারির মোট পুরস্কার মূল্য ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বছরের চারটি লটারিতে মোট পুরস্কার মূল্য ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু এই পরিমাণ টাকা কোনো বছরই বিতরণ হয় না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাইজবন্ডের গ্রাহকরা পুরস্কারের ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই অর্থবছরে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার পুরস্কারের কোনো দাবি আসেনি। পরের অর্থবছরে গ্রাহকরা পুরস্কার নিয়েছেন ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার পুরস্কার গ্রাহকরা নেননি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আর ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার পুরস্কারের কেউ দাবি করেনি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুটি লটারির বিপরীতে গ্রাহকরা ১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা নিয়েছে। দাবি আসেনি ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার।
অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, পুরস্কারের অর্থ না নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রাহকদের অনেকে প্রাইজবন্ডের ফলাফল ঠিকভাবে মেলাতে পারেন না। এ ছাড়া ভুলে যাওয়া এবং হারিয়ে ফেলার কারণেও অনেকে পুরস্কার নেন না বা পুরস্কার দেওয়া সম্ভব হয় না।
ফলাফল জানার ওয়েসাইট চালু: প্রাইজবন্ডের লটারির ফলাফল জানা চালু করা হয়েছে ‘প্রাইজবন্ড রেজাল্ট ইনকোয়ারি সফটওয়্যার বা পিবিআরইএস’ নামের বিশেষ সফটওয়্যার। গতকাল এনবিআর কার্যালয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ই-সেবা অংশে প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’-এর ফলাফল অনুসন্ধানে যাবেওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যারে প্রবেশ করে ফল জানা যাবে। ওয়েবসাইটে দুই পদ্ধতিতে প্রাইজবন্ডের ফলাফল জানা । একটি হচ্ছে সার্চ বক্সে নম্বর লিখে। অন্য পদ্ধতি হচ্ছে মাইক্রোসফট এক্সেল ফাইল আপলোড করে ফলাফল জানা। প্রসঙ্গত, আগে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ফলাফল অনুসন্ধানের ব্যবস্থা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, প্রাইজবন্ডের লটারি থেকে কেউ পুরস্কার পেয়েছে কিনা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। আশা করা যাচ্ছে এ পদ্ধতিতে লটারির ফলাফল জানা সহজ হবে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, প্রাইজবন্ডের সব পুরস্কার বিতরণ হয় না।
একই অবস্থা ইএফডি লটারিতে: প্রতি মাসে সারাদেশে ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধকারীদের মধ্য থেকে ১০১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর প্রথম পুরস্কার এক লাখ টাকা। বাকি ১০০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারও যারা পাচ্ছেন তারা নিতে আসছেন না। গত ১৩টি লটারি থেকে মোট ৮৯ জন পুরস্কার নিয়েছেন। অথচ পুরস্কার পেয়েছেন ১৩১৩ জন। গতকাল ইএফডির ১৪তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে ইএফডিকে পরিচিত করানোর। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ পুরস্কারের অর্থ নিতে আসছে না। কেন এ পরিস্থিতি তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।