চিলমারীতে নাব্যতা হারিয়ে ব্রহ্মপুত্র এখন মরা নদ

আরো পরিবেশ রংপুর সারাদেশ
শেয়ার করুন...

হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জল শুকিয়ে যাওয়ায় কড়ালগ্রাসী খরস্রোতে পরিনত হয়েছে, এখন ব্রহ্মপুত্র নদ। নব্যতা হারিয়ে এখন বর্তমানে ধু ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে। এ নদে বর্ষা কালে পানির প্রবাহের যে কল কল ধ্বনি ছিল, তা এখন আর নেই মরা নদে পরিনত হয়েছে দেখে মনে হয় যেন ছোট একটি মরা খাল। চারিদিকে ধুধু বালুচর আর বালু চর। অনেক স্থানে আবার আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। মুল নদেও দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। নদের গতি পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় নাব্যতা সংকটে নৌ-পথে চলা ফেরি চলাচল বন্ধ আছে এবং নৌকা প্রায়ই আটকে পড়ছে। সময়মতো এবং সঠিক ভাবে নদের ড্রেজিং না করায় নাব্যতা সংকটসহ মরা খালে পরিণত হচ্ছে কড়াল গ্রাসী খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। নদীতে নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙি নৌকা চলাচল করতেও অনেক সময় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যে পরিবার গুলো এক সময় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত, মুল পেশা হারিয়ে তারা আজ দিন মজুরসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এতে করে চরে বসবাসকারী মানুষেরা জীবন  নিয়ে দুর্চিন্তায় আছেন। নদের এই অবস্থার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে জানান অনেক কৃষক। ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বেশী দুরত্বের চর গুলোয় বসবাসকারী মানুষ সহজে হাট-বাজার করতে পাচ্ছে না। সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এখন ও চলছে। আর এর মাধ্যমে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। যত্রতত্র শ্যালো মেশিন চালিত ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অপরদিকে সঠিকভাবে ড্রেজিংয়ের অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ এখন নাব্যতা হারিয়ে শুধুই বালুচর। শুকিয়ে যাওয়া চরের কোথাও কোথাও ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম শাক-সব্জি ও ফসল। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন চিলমারী ইউনিয়নের  মেহেদী হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্র যে কড়াল গ্রাসী ও খরস্রতা একটি নদ তা শুধু বর্ষা মৌসুমেই বোঝা যায়। আর বর্ষা শেষ হলেই মাইলের পর মাইল শুধু চর আর চর। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ হাট ব্যবসায়ি মমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন (চিলমারী, নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়ন) ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভাজিত। ইউনিয়ন তিনটির অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রিসহ বাজার-ঘাট করতে সপ্তাহে দুদিন জোড়গাছ হাটে আসতে হয়। নদে নাব্যতা না থাকায় অনেক দুরের পথ হেটে অতি কষ্টে তাদের বাজারে আসতে হয়। অপরদিকে ঐ চরাঞ্চল সমুহে উৎপাদিত পণ্যের পরিবহণ ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুন। তেল ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী বলেন, চরাঞ্চলীয় এলাকায় নেয়ার জন্য নৌকা পর্যন্ত আনতে আগে এক ড্রাম তেলের ভাড়া ছিল ২০টাকা। নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এক ড্রাম জ্বালানী তেল নৌকা পর্যন্ত আনতে পরিবহণ ব্যয় হচ্ছে ১০০টাকা। নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় চিলমারী থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর যেতে ফেরি এবং নৌকায় ঝুকি নিয়ে দ্বি-গুনের ও বেশী সময় ধরে পার হতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের সময় এবং আর্থিক ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা সমুহে ২হাজারের বেশী মৎস জীবি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তারা মাছ ধরতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মাঝিপড়া এলাকার ফুলেল মাঝি, সুকুমার রায়সহ অনেকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা নদি। এখানে কোনো মাছ নেই। সারা দিন জাল ফেলে ২০-৩০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। তাই জেলে পরিবার গুলো বড় কষ্টে আছে। মাছ না থাকায় পেশা ছেড়ে অনেকে দেশের বিভিন্ন শহরে রিকশা চালান, কেউ দোকানে, কেউবা মাটি কাটার কাজ করছেন। নদীতে পানি নেই এটাতো আর পেট বোঝেনা প্রতিদিন তো খেতে হয়। পেটে খাওন দিতে আমাদের ধার দেনা এবং এনজিও থেকে ঋণ করতে হচ্ছে। চিলমারী ইউনিয়নের অনেকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুকিয়ে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় ব্যবসায়-বাণিজ্য কিংবা চলার পথে নানাবিধ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদকে পরিকল্পিত ভাবে খনন করা হলে নদটি এলাকাবাসীর আশির্বাদ হয়ে থাকত। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হলে উপকৃত হবে চরাঞ্চলীয় মানুষসহ, উপজেলার অনেক খেটে খাওয়া মানুষেরা


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *