চিনির বাজারে হঠাৎ কী হলো?

অর্থনীতি আইন-অপরাধ আরো জাতীয় সারাদেশ
শেয়ার করুন...

অনলাইন ডেস্কঃ
বাজার থেকে হঠাৎ করেই গায়েব চিনি। কোনোখানেই মিলছে না সরকার নির্ধারিত মূল্যে। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চিনির দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা- অভিযোগ ক্রেতাদের। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে খোলা চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি প্রায় উধাও। পাইকারদের অভিযোগ, মিলগেট থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে প্যাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে খুচরা বাজারে। ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে দাম নির্ধারণের এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা।

খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি। গত ২২শে সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির মূল্য ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৯৫ টাকা কেজি ও ১০০ টাকার উপরে।
এদিকে সরকার দাম ঠিক করে দেয়ার পরও তিন থেকে চারদিনের ভেতরে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিষয়টি তদারকি করতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ক্রেতারা বলছেন, জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না। নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন কমেছে। যার জন্য বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

খুচরা দোকানিরা বলছেন, বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।
তথ্য মতে, দেশে চিনির মোট চাহিদার বড় একটি অংশ মেটানো হয় আমদানি করা চিনির মাধ্যমে। এই চিনি আমদানি হয় মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ঈগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের হাত ধরে। ব্যবসায়ীরা এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাতে চিনির দাম বাড়াচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চিনির সব ধরনের কাঁচামাল রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় চিনি সরবরাহ কম থাকায় চিনির দাম বাড়ছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার দর মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেই চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা ১০০ টাকায়।

টিসিবি’র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে টিসিবি’র চিনির দাম বাড়েনি।
রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ কিংবা তিনদিন আগের কেনা চিনি কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে এ সময় বাজার ও দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনির দেখাই মেলেনি। এই দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা কেজিতে। আর প্যাকেটজাত চিনি ছিল ৯৫ টাকা কেজি। অথচ গত ৬ই অক্টোবর সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাতের দাম ৯৫ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। বরং এখন উল্টো দাম বাড়ছে। তার আগে গত ২২শে সেপ্টেম্বর খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪ টাকা আর প্যাকেটজাত ৮৯ টাকা। নির্ধারিত দামে চিনি সরবরাহ না দেওয়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
এক বিক্রেতা বলেন, তীর ও ফ্রেশ কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনি বেশি চলে। তবে এ দুই কোম্পানির সরবরাহ নেই। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

মহাখালী ওয়্যারলেস গেইটের বাজারের দোকানি মনির বলেন, এক সপ্তাহ আগে চিনি কেনা ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। এখন সেই চিনি কেনাই পড়েছে ৫৩০০ টাকা বস্তা। বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা। আমি ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
আরেক ব্যবসায়ী নূরুল বলেন, উত্তর বাড্ডা আড়ৎ থেকে মাল এনে এখানে পাইকারি বিক্রি করি। আমি পাইকারি বিক্রি করছি ১০৫ টাকা। আর খুচরা বিক্রি করছি ১১০ টাকা। ১০০ টাকা কেজিতে ৫ বস্তা মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ চিনির অর্ডার দিয়েছেন ৫ দিন আগে। এরপর কোম্পানির আর কোনো খবর নেই। দাম বাড়ছে, এখন অর্ডার দিয়ে মাল পাচ্ছি না, আর যখন দাম কমবে জোর করে দিয়ে যায় কোম্পানিগুলো।

মেঘনা গ্রুপের ডিলার দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোম্পানিতে চিনি নেই, চিনি সংকট এ কারণে আমরা চিনি পাচ্ছি না। তাই দোকানদারদের দিতে পারছি না। কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে কোম্পানি জানিয়েছে, গ্যাস সংকটের কারণে চিনির উৎপাদন কমে গেছে।

এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, কোম্পানিতে চিনির কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কোম্পানির দিনে ৫ হাজার টন চিনি পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু পরিশোধন করছে মাত্র ১ হাজার টন। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, শনিবার রাজধানীতে অধিদপ্তরের তিনটি টিম নেমেছে। বিশেষ করে চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান-মিল ও পাইকারি বাজারে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশিতে চিনি বিক্রির দায়ে ঢাকার মিরপুরের সাত প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানরা করেছে অধিদপ্তর টিম।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.