চট্টগ্রামে গণপরিবহণ যাত্রীদের অন্তর্ভূক্তিমূলক সেবা নিরুপণ গবেষনার ফলাফল নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন ইপসার

আরো চট্টগ্রাম পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

ইপসা সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর সকল ধরনের যাত্রী বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীন জনগোষ্ঠীর জন্য গণপরিবহনসমূহে নিরাপদ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সেবাপ্রদানের চ্যালেঞ্জ এবং দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করা, গণপরিবহনসমূহে বিদ্যমান নিরাপদ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সেবাসমূহ উন্নয়নের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা এবং চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন সেবার গুণগত মান উন্নয়নে নিরাপদ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক পাবলিক সেবা প্রদানকারী স্টকেহোল্ডার সক্ষমতা নিরুপন করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় “চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের অন্তর্ভূক্তিমূলক সেবা নিরুপণ বিষয়ক গবেষনা” কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এই গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনায় কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতায় প্রদান করছেন The United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific (UNESCAP) ।
উক্ত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন এবং উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয় বিষয় নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সরকারী কর্মকর্তা, বেসরকারী সংস্থা, গবেষক, শিক্ষক ও সাংবাদিক, গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক, গণপরিবহন ব্যবহারকারী বিভিন্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আজ মঙ্গলবার (৭ মে, ২০২৪) সকাল ১০ ঘটিকায় নগরীর একটি হোটেলে এই কর্র্মশালা আয়োজন করে ইপসা।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর যুগ্মসচিব নাজনিন ওয়ারেস। এছাড়া অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী।
ইপসার পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) নাছিম বানুর পরিচালনায় কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (উত্তর) এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কীর্তিমান চাকমা, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, বিআরটিএ এর সহকারি পরিচালক (প্রকৌশল) আতিকুর রহমান, বিআরটিসি এর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. জুলফিকার আলী, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ আবু ঈসা আনছারী, ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল এলায়েন্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল প্রমুখ।
কর্মশালায় উন্নয়নশীল এবং সমন্বিত নগর পরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং পরিবহণ সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইউএনএসকেপ এর প্রতিনিধি মদন বি রেজভি এবং নগর পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ভারতের সিইপিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিভানন্দ সোয়ামি। ঢাকা ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে নগর পরিবহন ব্যবস্থার চিত্র নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর যুগ্মসচিব নাজনিন ওয়ারেস। চট্টগ্রামের গণপরিবহনের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ও প্রয়োগ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মো. নুরুল হাসান। চট্টগ্রামের গণপরিবহনে অন্তর্ভূক্তিমূলক সেবা নিরুপণ গবেষনার ফলাফল তুলে ধরেন ইপসার পরিচালক মো. শাহজাহান।
গবেষণার ফলাফল
ইপসার গবেষণা হতে জানা যায় যে, চট্টগ্রাম মহানগরীর গণপরিবহন সেবা নিয়ে ৫৪ শতাংশ মানুষই অসন্তুষ্ট। তারা এই অসন্তুষ্টির কারনে হিসেবে অতিরিক্ত ভিড়, যানজট, যানবাহনের স্বল্পতা, পরিষেবার অপর্যাপ্ত, যানবাহনের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কোন সুবিধা না থাকা, নিরাপত্তার অভাব এবং উচ্চভাড়া কে দায়ী করেন।
দিনের মোট তিন সময়ে গণপরিবহণে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এই সময় পরিবহণ চালকরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি, নারী, গর্ভবতী নারী বা শিশুদেরকে গাড়ীতে উঠতে বা নিতে চান না। এছাড়াও, গণপরিবহন পরিষেবা গুলোতে প্রবীণ, গর্ভবতী নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত বসার জায়গা থাকার সত্ত্বে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসকল সংরক্ষিত জায়গা ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়না। ৮০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন যে, চট্টগ্রামে গণপরিবহন সেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ যাত্রী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়।
প্রায় ৬৬ শতাংশ নগরবাসী গণপরিবহনে ভ্রমনকালীন সময়ে অসুবিধা বোধ করেন এবং ৬৯ শতাংশ মনে করেন নগরীর গণপরিবহন সেবা তাদের জন্য অনিরাপদ। অত্যাধিক ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে যৌন হয়রানী, পকেটমার ও মোবাইল ছিনতাই ঘটনা চলন্ত বাস থেকে নামতে বাধ্য করা ইত্যাদি এই অনিরাপত্তার কারণ।
এমতাবস্থায়, পরিবহন শ্রমিকদের সক্ষমতা উন্নয়ন, সড়ক পরিবহন আইন পরিচিতি এবং অনুসরণ, আসন সংখ্যা অনুসারেই কেবল মাত্র যাত্রী তোলা; নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, প্রবীন বান্ধব পরিবহন সেবা, এবং বাস স্টপেজ এ ভালভাবে থামিয়ে যাত্রী তোলা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্রাইভেট পরিবহন কোম্পানি গঠন, বাসভাড়ায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবস্থা, যাত্রী ও পরিবেশ বান্ধব আদর্শ স্টপেজ নির্মাণ করারও সুপারিশ করা হয়।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.