জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চরে বাদাম চাষ করে দিন বদলের চেষ্টা করছিলেন চরাঞ্চলের অতি দরিদ্র কৃষকেরা। কিন্তু এ বছর অতি বর্ষণসহ আগাম বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষকের ফসলের ক্ষেত। পরিপক্ক হওয়ার আগেই বাদামক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। প্লাবিত চরে এখন চলছে বাদাম উত্তোলন। তবে চাষিদের মন ভালো নেই। আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাদাম চাষিরা।
জানা যায়, এ বছর চর বেথুরী, চর কর্নেশন, মজলিশপুর, চর দেবীপুর, ধোপাগাথি, বেতকা, রাখালগাছিসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক বাদাম চাষ হয়েছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চরের অভাবি কৃষক পরিবারগুলো কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। কৃষকেরা তাই ডিসেম্বর- ফেব্রুয়ারি মাসে বোরোর বদলে বাদাম চাষ করে মে-জুলাই মাসে তা উত্তোলন করে।
সরজমিন দৌলতদিয়া ১নং ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্তপকৃত বাদাম ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন কৃষাণীরা। ঘরে ঘরে চলছে বাদামের কাটা-মাড়াই। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে চরের বালু মাটিতে ফসল তেমন একটা হতো না। ফলে এখানকার লোকজনের অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। গত কয়েক বছর ধরে পলি জমে ভরাট হওয়া চরের জমিতে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ হচ্ছে। স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন কৃষকেরা। কিন্তু এ বছর পানির নিচে বাদামক্ষেত ডুবে থাকায় বাদামের দানা ভালো হয়নি। প্রতি একর জমিতে ২৪ থেকে ২৫ মণ বাদামের ফলন হলেও এবারে অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
দৌলতদিয়া ১নং ফেরিঘাটের মজিদ শেখের পাড়া এলাকার কৃষক মমিন মন্ডল বলেন, তিনি চলতি বছরে ১৫ বিঘার মতো বাদামের আবাদ করেছেন। কিন্তু আগাম বর্ষার পানি বাড়াতে ৪ বিঘা বাদাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।
আরেক কৃষানী বাবু শিকদারের স্ত্রী বিলকিস খাতুন বলেন, তিনি এবার ২৫ বিঘার মতো বাদামের আবাদ করেছেন। নিজের জমি ১০ বিঘা থাকলেও বাকি ১৫ বিঘা লিজ নিয়ে এ বাদাম আবাদ করেন। কিন্তু এবার অল্প সময়ের মধ্যে পদ্মায় পানি বাড়ে যাওয়ায় ৪ একরের মতো বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সরকার থেকে কোন অনুদান পাইনি। ৭ হাজার টাকা করে বীজ কিনে বাদাম লাগাইছি। আমরা কোন সার, বীজ কিছুই পাইনি। ভেবেছিলাম এবার বাদাম থেকে কিছু টাকা লাভ হবে, কিন্তু এবার পানিতে তা তলিয়ে স্বপ্ন মাটি মিশে গেলো।
স্থানীয় আরেক কৃষানী চাকেন মন্ডলের স্ত্রী আমিরন বিবি বলেন, এবার ১০ বিঘা বাদাম লাগাইছি। ১ একরে বেশি জমিতে পানি উঠে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় সঠিক সময়ের আগেই বাদাম উত্তোলন করায় অনেকের বাদাম এখনও পুক্ত (পরিপক্ক) হয়নি। তিনি আরো বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য এতো কিছু দিলো, আমরা তো কিছুই পেলাম না। নদী ভাঙা মানুষ আমরা। আমাদের মতো অসহায় কৃষকদের খোঁজ কেউ নেয় না।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ চারটি ইউনিয়ন। বিশেষ করে দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বাদামের চাষ হয়ে থাকে। এ বছর উপজেলায় মোট ৩শ ৭১ হেক্টর (২৭৮২.৫) বিঘা জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। পানির নিচে আংশিক তলিয়ে আছে ৮ হেক্টর (৬০) বিঘা বাদাম।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে বাদাম চাষে উৎসাহিত করেছি। এ বছর তারা বিঘা প্রতি ৭/৮ মণ করে বাদাম পেলেও পানি বৃদ্ধির কারণে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলার চলতি মৌসুমে ৩শ ৭১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষকেরা এখন বাদাম তুলতে ব্যস্ত। এ বছর অতি বর্ষণে ৮ হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। উপজেলার কৃষকেরা কি পরিমাণ সার বীজ পেয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যে কোন কৃষক একটি প্রণোদনা পাবেন। সরিষা বা বাদাম বীজ। যারা সরিষা পাবেন তারা বাদামের বীজ পাবেন না। তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত কৃষকের বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে আমরা সেসব কৃষকের তালিকা তৈরি করে পাঠাবো। আশা করি আগামীবছর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে।