গোয়ালন্দে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা; পৌর ছাত্রলীগ নেতা রাতুল, আকাশসহ ৩জনকে বহিস্কার করল উপজেলা ছাত্রলীগ

আরো ঢাকা রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ীঃ
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রাতুল আহম্মেদের ফেস্টুন সরিয়ে সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবির হোসেন হৃদয়ের ফেস্টুন লাগানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের চলমান উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে।

এ ঘটনার জের ধরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রাতুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আকাশ সাহা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক মৃদুল হোসেনকে তাদের উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ।

গত ১২ জুলাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তুহিন দেওয়ান ও সাধারণ সম্পাদক আবির হোসেন রিদয় স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৬ জুলাই রাতে গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের ফেসবুক আইডি থেকে তা প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে গত ১২ জুলাই উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা ছাত্রলীগের সকল কর্মকান্ড স্থগিত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগ এ ক্ষেত্রে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে তাদেরকে বহিষ্কার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবির হোসেন রিদয় বলেন, গত ৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে গোয়ালন্দ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাতুল আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আকাশ সাহা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মৃদুল হোসেনের নেতৃত্বে ১২/১৩ জন গোয়ালন্দ বাজারে আমার ব্যাক্তিগত অফিসে হামলা করে। এ সময় তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও অফিসের চেয়ার-টেবিল,আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং ড্রয়ারে রাখা ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে গত ১০ জুলাই গোয়ালন্দ ঘাট থানায় আমি তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি।

এ ঘটনার জন্য গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের তদন্ত কমিটি গঠনের আগেই আমি ও সভাপতি তুহিন দেওয়ান মিলে জরুরি ভিত্তিতে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রাতুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আকাশ সাহা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মৃদুল হোসেনকে তাদের উপজেলা ছাত্রলীগের দলীয় সাধারণ সদস্য পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করি এবং স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট সুপারিশ করি। যা কিছুটা বিলম্বে প্রকাশ করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় উপজেলা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাতুল আহম্মেদ বলেন, মিথ্যা মামলা দেয়ার পর তারা কোন ধরণের সভা না করে অন্যায়ভাবে আমাদের বহিষ্কার করলো। যেটা সম্পূর্ণভাবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী হয়েছে । আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। আমাদের সমস্যা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ গত ১২ জুলাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কাজ চলমান থাকায় এবং তারা ছাত্রলীগের সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত করায় আমরা কোন ধরণের কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। অথচ উপজেলা ছাত্রলীগ,উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে

একের পর এক কর্মকাণ্ড করে চলেছে। এতে করে ছাত্রলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

তিনি দাবি করেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি চাই।

এদিকে উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের উভয় কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে উভয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কোন সদস্যকে ওই কমিটি বা কমিটির সভাপতি -সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কার করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে জেলা কমিটির মাধ্যমে কোন সুপারিশ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে গেলে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। কিন্তু গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগ এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ ৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বলে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি দুঃখজনক ও তাছাড়া এ ক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কোন সভাও করেনি বলে শুনলাম। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগের মধ্যে অস্থিতিশীলতা আরো বেড়ে যেতে পারে বলে জানান এই নেতা।

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.