গোমতীতে সৌখিন মাছ শিকারীদের পলো ও জালে মাছ শিকার

আরো কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ বিনোদন সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মাহফুজ বাবু ;
ভারতের পাহাড়ি ঢাল বয়ে নেমে কুমিল্লার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদীটির নাম -গোমতি। গোমতী নদীকে কুমিল্লার দুঃখ বলেও ডাকা হয়। ফাল্গুন চৈত্র মাসে এই নদীটির কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর পানি। জোয়ার ভাটাহীন এই নদীর কোথাও বা আবার পানির মাঝে জেগে আছে চর। এই মৌসুমে জেলার সৌখিন মাছ শিকারীরা সাধারণত পনি কমে আসা খাল, নদী বিলে মাছ শিকারে বের হন।

গতকাল সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা অংশে লাকসাম, বাগমারা,, ভুশচি সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় শ’তিনেক সৌখিন মৎস্য শিকারি পলো, ছিটা জাল আর মই জাল নিয়ে একযোগে এসেছেন মাছ শিকারে। আনুমানিক সারে ১১টায় গোমতীর জালুয়াপাড়া খেয়া এলাকা দিয়ে নেমেছেন তারা। পূর্ব পশ্চিমে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীতে পলো হাতে উত্তর দক্ষিণে চার থেকে পাঁচটি লাইনে মানব বাঁধ তৈরি করে পানিতে পলো ফেলে মাছ শিকার করতে শুরু করেন তারা। নদীর দুই তীরেই কনুই বা ছিটা জাল ছুড়ছেন বেশ কয়েকজন শিকারী।
একসাথে এত মাছ শিকারিদের পলো দিয়ে মাছ শিকার দেখতে স্থানীয়দের অনেকে জড়ো হয়েছে নদীর তীরে। কারো পলো বা জালে মাছ পড়লেই সকলে সম্মস্বরে হই হুল্লোড় করে করে মাতিয়ে তুলছেন পুরো এলাকা। ভিন্ন এক পরিবেশ হারানো এক গ্রামীণ আবহ তৈরি হয়েছে যেন। বিভিন্ন প্রকার দেশী মাছ রুই, কালীবাউশ, কার্প, আইড় সহ নানা জাতের মাছ ধরাও পরছে। শিকারীদের সকলেই কম বেশী পেয়েছেন মাছ। আবার অনেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে।

প্রায় ৪ঘন্টা অবধি জালুয়া পাড়া থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকে ভাটপাড়া পর্যন্ত নদীতে মাছ শিকার করেন তারা। এসময় কারো কারো পলোতে ৩ থেকে ৬কেজি ওজনের মাছও ধরা পরেছে। পাড়ে দাড়িয়ে অনেকেই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তারা বিক্রি করতে নারাজ। সদর দক্ষিণের চৌয়ারা রায়পুর থেকে মাছ শিকারে আসা মোহন ড্রাইভার ও তার ভাতিঝা দুজনে কার্ফু ও রুই পেয়েছেন দুটো। ওজনে প্রতিটি তিন কেজি করে হবে বলে জানায় তারা। দুটো মাছ দুহাজার টাকা দাম হাকালেন একজন তবে তাদের সাফ জবাব লাখ টাকাও বিক্রি করবেন না। শখের মাছ পরিবার পরিজন নিয়ে খাবেন।

মাছ শিকারীদের একজন হালিম মিয়া বাগমারা থেকে এসেছেন তিনি সহ প্রায় ৩০জনের একদল। তারা জানায় মোবাইল ফোনে ফোনে সকলে একটি তারিখ নির্ধারণ করে বছরের এই সময়টাতে মনোহরগঞ্জ, দাউদকান্দি, কুমিল্লা সদর সহ বিভিন্ন এলাকার খাল বিল নদীতে মাছ শিকারে বের হন। বাস ভাড়া করে কিংবা সিএজি পিকাপ ভাড়া করে সকলে এসে নির্ধারিত স্থানে জড়ো হয়ে মাছ শিকার করেন তারা। এটি কেবল শখের বশেই করেন তারা। সকলে একসাথে এই মিলন মেলা ও মাছ শিকারে বের হয়ে আনন্দ উৎসব করা সেই সাথে একে অন্যের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব এমনকি আত্মীয়তায় জড়িয়ে পরেন অনেকে। মাছ ধরার এমন আয়োজন প্রায় প্রতিবছরই করেন তারা।

আঁকাবাঁকা গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবটি বহু আগে থেকে চলে আসছে। শিকারিদের মাঝে পুরনো বা বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা যায় গোমতীতে আগে বড় বোয়াল, বাগাড়, আইড়, চিতল, কাতল, বেলে, কালিবাউশ পাওয়া যেত। এখন সে তুলানায় মাছ পাওয়া যায় না। সময়ের পরিক্রমায় নানা কারনে কমেছে গোমতীর পানি ও মাছ।
গবেষকদের মতে ফসলে কিটনাশক, কল কারখানার বর্জ্য ও জলবায়ুর প্রভাবে গোমতী দিন দিন হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য। সঠিক পরিকল্পনা করে নদীটি খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে কুমিল্লার প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য সহ জেলার অর্থনৈতিক খাতে ভুমিকা রাখতে সক্ষম গোমতী নদী।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *