কুমিল্লায় হেযবুত তওহীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

আইন-অপরাধ আরো কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো হেযবুত তওহীদের ঈদ পুনর্মিলনী ও জেলা কমিটির পরিচিতি সভা। শনিবার (১২ জুলাই) কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়। এসময় সংগঠনের নেতারা শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে গণবিপ্লবের ঘোষণা দেন।

সংগঠনটির কুমিল্লা জেলার সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন।

তিনি বক্তব্যে বলেন, পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি। মোট ৫৭টি দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদেরও বিশাল ভাণ্ডার মুসলিমদের দখলে। এত বিশাল ভূখণ্ড, এত সংখ্যা ও এত ধন-সম্পদ থাকার পরও আমরা মুসলমানরাই এখন পৃথিবীর সবচাইতে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত গোলাম জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছি। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, আফগানিস্তানসহ একের পর এক মুসলিমপ্রধান দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।
পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদীদের টার্গেট হচ্ছে মুসলিম জাতি। তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে বাংলাদেশের ওপরে। কারণ আমাদের দেশের ৯২ শতাংশ মোসলমান। আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই মানচিত্রের উপর আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবারই লোলুপ দৃষ্টি। এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ পেয়ে যাবে এবং নিজেদের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে পারবে।

উত্তরণের উপায় তুলে ধরে তিনি আরো বলেন,
তাদের হাত থেকে বাঁচতে হলে একজন নেতার হুকুমে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাসূল সাঃ যেভাবে মদিনার মাটিকে রক্ষা করেছিলেন সেভাবে বাংলার মাটিকে রক্ষা করতে হবে। ঐক্যের সূত্র হবে লা-ইলাহা-ইল্লালাহ আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানিনা। আর আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের অবস্থাও গাঁজা বাসীর ভাগ্য বরণ করতে হবে।

কুমিল্লা জেলার নারী সম্পাদক সেলিনা আক্তার ইতির সঞ্চালনায় উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম। বর্তমান সমাজের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আইয়ামে জাহেলিয়াতকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত কয়েকদিন পূর্বে দেখলাম পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে মারামারিতে শতশত লোক আহত হয়েছে, পুলিশও বাদ যায়নি। এই সমাজে কেউই নিরাপদ নয়। আজ ভায়ের কাছে বোন নিরাপদ নয়। মা সন্তানকে হত্যা করছে, সন্তানের হাতে খুন হচ্ছে বাবা-মা। মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে বাবার কাছে। অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে মব কালচার। কোন একটি তথ্য শুনলে সেটা যাচাই-বাছাই না করেই শুরু হয়ে যায় হামলা, লুট, ভাংচুর, হত্যা। এগুলো ইসলামের শিক্ষা নয় এই সমাজ ইসলামের সমাজ নয়। এমতাবস্থায় আমাদের লক্ষ্য করতে হবে রাসুল সাঃ এই সময় কি করেছিলেন। তিনি ক্ষমতা চাননি, বাদশাহী চাননি। তিনি তওহীদের ভিত্তিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সময় এসেছে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্র বাদ দিয় আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের সহ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান। বক্তব্যের শুরুতে তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী ও ইসলাম বিকৃতির ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা ইবলিশের হাতে রাষ্ট্রীয় জীবন তুলে দিয়ে ব্যক্তি জীবনে ইসলাম পালন করছি। কিন্তু ইসলাম নিজেই একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কিভাবে রাষ্ট্র চলবে, কিভাবে অর্থনীতি চলবে, শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে তা কোরআনে রয়েছে। তবে আমরা সেটা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা না করে সওয়াব অর্জনের জন্য তেলাওয়াত করছি মাত্র। যে কারণে আমাদের সমাজ জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত হয়েছে। সর্বত্র অন্যায়,অবিচার, অত্যাচার, খুন, রাহাজনি চলছে। আর এরমধ্যে থেকে আমাদের ধর্মীয় নেতারা ফেরকা-মাজহাব নিয়ে মতভেদ ও রাজনৈতিক নেতারা সংস্কার আর নির্বাচন নিয়ে পড়ে রয়েছেন। তব বাস্তবতা হচ্ছে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন সংস্কার বা নির্বাচন দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা ছাড়া মানব রচিত জীবন বিধান দিয়ে শান্তি আসবে না। হয় আপনার আল্লাহর দ্বীন কায়েম করে শান্তিপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। আর যদি সেটা না করেন তবে অচিরেই আল্লাহর মোমেন বান্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক গণবিপ্লব ঘটাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিভাগের সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নারী-পুরুষ দু’জনকেই আল্লাহ খলিফা হিসেবে তৈরী করেছেন। ফতোয়ার বেড়াজাল দিয়ে নারীদের আটকে রাখার সুযোগ নেই। আরবের জাহেলিয়াতের সেই সময়ের ইতিহাস যদি দেখি সেই সমাজে মেয়ে শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। রাসূল সাঃ অধিকার বঞ্চিত সেই নারীদের যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে গেলেন। নারীরা হাসপাতা ও বাজার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতেন। উষ্টির যুদ্ধে আম্মা আয়েশা রাঃ ১০ হাজার সৈনিকের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুর্ধর্ষ মৃত্যু ভয়হীন সেই নারীরা আজকে ফতোয়ার কালো কাপড়ে আবদ্ধ হয়ে গেছে। মসজিদেও তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক জায়গায়। ফতোয়ার কারনে নারীরা বৈষম্যমূলক আচরেন শিকার হয়ে তাদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে জাতির অর্ধেক নারী, এই নারীদের বাদ দিয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন কল্পনাও সম্ভবনয়। এখন সময় এসেছে আল্লাহর রাস্তায় জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করার। আর কোন ধর্মব্যবসায়ীর ফতোয়ায় ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিভাগের সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া, কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী সম্পাদক জোবেদা আক্তার বেবী, কুমিল্লা অঞ্চলের নারী সম্পাদক আসমা আক্তার প্রমুখ।

কুমিল্লা জেলা হেযবুত তাওহীদের আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য শেষে জেলা কমিটির সদস্যদের পরিচিতি সভা ও ফটোসেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.