দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুল
জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ গত বছরে করোনা মহামারির কারণে এসএসসি পরীক্ষা আংশিক (৩টি বিষয়ে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে সকল বিষয় পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, সেই সকল বিষয়ে নেয়া ফরম পুরনের অর্থ শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ফেরত দেয় শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ফরম পুরনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের রিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ঘর বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত বছর করোনা মহামারির কারণে ফরম পুরনের পরও এসএসসি’র সব বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা গ্রহন করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষার্থীদের তত্ত¡ীয় পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষা ও কেন্দ্র ফি বাবদ আদায় করা অব্যয়িত অংশ নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ফেরত প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গুলো। সে অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্রে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে, সেসব বিষয়ের জন্য আদায় করা বোর্ড ফি থেকে বিষয়প্রতি ৩০ টাকা করে ফেরত পাবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক বিষয়ের ক্ষেত্রে (আইসিটি ছাড়া) আদায় করা বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে বিষয়প্রতি ২০ টাকা এবং আইসিটি বিষয়ের ব্যবহারিক বোর্ড ফি ৩০ টাকা ও চতুর্থ বিষয়ের ব্যবহারিক বোর্ড ফি ৩০ টাকা ফেরত দেয়ার কথা শিক্ষার্থীদের।
বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন টাকা ফেরত পেলেও বিভিন্ন অপকৌশলে শিক্ষার্থীদের অর্থ ফেরত না দিয়ে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে।
শিক্ষার্থী মো. জনি প্রামানিক জানান, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ফেরত প্রদান করা টাকা চাইতে গেলে হেড স্যার আমাকে অপমান ও ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন এবং বলেন, বিদ্যালয়ের বেতন বাবদ ওই টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশংসা পত্র আনতে গেলে ওই অতিরিক্ত টাকা প্রাপ্তি স্বাক্ষরসহ আরো অতিরিক্ত ২শ টাকা আদায় করেন।
অপর শিক্ষার্থী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার বেতন মওকুফ ছিল। তার পরেও আমার টাকা ফেরত দেয়নি হেড স্যার। তিনি আমাদের টাকা আত্মসাৎ করায় আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
এদিকে নদী ভাঙন কবলিত বিদ্যালয় দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাই স্কুল। নদী ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টি কয়েক বছর আগে স্থানান্তর করা হয়। পূর্বের স্থানে থাকা স্কুলঘরটি বিক্রি করে সেই টাকাও প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক এলাকাবাসি।
এসব বিষয়ে দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুমতি সাপেক্ষেই তাদের ফরম পুরনের টাকা প্রদান করা হয়নি। এ মর্মে তারা স্বাক্ষরও করেছে। তিনি ওই টাকা আত্মসাৎ করেননি দাবি করে বলেন, শিক্ষার্থীদের টাকা আমার কাছে আছে, কেউ এখনো ফেরত চাইলে তা দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ঘর বিক্রির ব্যাপারে তিনি জানান, ৫২ হাজার টাকায় ওই ঘর বিক্রি করা হয়। যে টাকা তৎকালীন বিদ্যালয়ের সভাপতি মরহুম নুরুল ইসলাম মন্ডলের কাছে ছিল। তিনি ওই টাকা স্কুলফান্ডে জমা দেননি। এ কারণে ওই টাকা আয়-ব্যায়ের কোন হিসেবও বিদ্যালয়ের নথিতে নেই।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুল হক খান মামুন জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগটি তদন্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।