মিন্টু ইসলাম শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সোনালী আঁশ পাট। ভালো দামেই বিক্রি হচ্ছে পাট। এছাড়া পাটের ফলনও হয়েছে বাম্পার। এরপরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছড়ানোর কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছে না এই উপজেলার কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় দুই হাজার দুইশ’ পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়। শুরু থেকেই আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার সময় সমস্যায় পড়েন। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দূর-দূরান্তে নিয়ে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। পাট ব্যবসায়ী সুত্রে জানা যায়,এছাড়া ও একাধিক পাট চাষির সঙ্গে কথা হয়। এরমধ্যে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী গ্রামের কৃষক শাহার আলী বলেন, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির পাট কাটতে ছয়জন শ্রমিক প্রয়োজন। এজন্য ছয়শ’ টাকা হারে মজুরি হিসেবে দিতে হয় তিন হাজার ছয়শ’ টাকা। আর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। তাই জমি থেকে অনেক দূরে নদী-নালা, খাল-বিল, ও ডোবায় নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়। এজন্য প্রতিবিঘায় আরও বাড়তি শ্রমিক ব্যয় হয় চার হাজার টাকা। এছাড়া পাটের আঁশ ছড়াতেও একই পরিমাণ টাকা শ্রমিককে দিতে হয়। অর্থাৎ শুধু পাট কাটা থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে দশ হাজার আটশ’ টাকা। এছাড়া জমি তৈরি, সার-বীজ, নিড়ানিসহ পাট শুকানো বাবদ খরচ হয়েছে আরও ছয় হাজার টাকা। সেই হিসেবে পাট চাষে প্রতিবিঘায় খচর প্রায় সতের হাজার টাকা। কৃষক শাহার আলীর দাবি, ওই জমি থেকে ছয় মণ পাঠ উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই পাট বিক্রি করে পেয়েছেন আঠারো হাজার টাকা। খরচ বাদে মাত্র এক হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু জমির ভাড়া ধরলে কোনো লাভই টিকবে না। লাভ শুধু পাট খড়ি। তিনি বলেন, লাভের আশায় নয়, গৃহস্থালী কাজে পাটের প্রয়োজন। তাই পাটের চাষ ছাড়তে পারছি না। এসব কেবল শাহার আলীর একার কথা নয়। এই উপজেলার সিংহভাগ পাট চাষি একই কথা বলেন।সোলায়মান আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, এবার পাটের ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাত মণ হারে পাটের ফলন হয়েছে। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। আবার শ্রমিক মজুরিও বিগত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি। তাই উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ফলে ভালো ফলন ও দামে পাট বিক্রি করেও খরচ উঠছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।এদিকে স্থানীয় হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাট বেচা-কেনা বেশ জমে উঠেছে। পাটের আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে। ভ্যানে করে নতুন পাট নিয়ে আসছেন কৃষকরা। ক্রেতা-বিক্রেতারা দর কষাকষি করেই পাট বিক্রি করছেন। ফলে ভালো দামও পাচ্ছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটে প্রতিমণ ভালো মানের পাট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপরও কৃষক লাভবান হতে পারছেন না। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এই মৌসুমে আবহওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেইসঙ্গে কৃষক পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন। উৎপাদন খরচ বাড়লেও হাট-বাজারে পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।