ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগঃ শাহরাস্তিতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ত্যাগ প্রধান শিক্ষকের

আইন-অপরাধ আরো ইসলামিক চট্টগ্রাম শিক্ষা শিক্ষা সাহিত্য সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মো.শাহ আলম ভূঁইয়াঃ
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে শ্রেণীকক্ষে বিসমিল্লাহ বলা নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বলশীদ হাজী আকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শিক্ষার্থীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ ৭ম শ্রেনিতে যান। সেখানে ওই শ্রেনীর ছাত্র তাজবিউল হাসান আগের দিন এসেম্বলিতে শপথ পাঠের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়ার কারনে প্রধান শিক্ষক তাকে কটুক্তি করেন। যার ফলে গত ২ দিন শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত ছিল।

বিষয়টি অবগত হয়ে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সোমবার সকালে পরিচালনা কমিটির কয়েজন সদস্য বিদ্যালয়ে আসলে শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করে। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা আটকে দেয়। এক পর্যায়ে পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে অফিস কক্ষে বসে পরিচালনা কমিটির সভা বসার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওই শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্র তাজবিউল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে গিয়ে তার কাছে আগের দিন এসেম্বলিতে শপথ পাঠের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়ার কারন জানতে চান। জবাবে সে জানায়, সে আগে একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়তো। সেখানকার ডায়েরীতে বিসমিল্লাহ লেখা ছিলো। তাছাড়া আমি হুজুরদের কাছে শুনেছি যে কোন কাজের আগে বিসমিল্লাহ পড়া ভালো। জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, কোন শয়তান, কোন ভন্ড এসব শিখিয়েছে তাকে কান ধরে এখানে নিয়ে আসো।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শাহরাস্তি মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান ঘটনাস্থলে আসেন এবং বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শান্ত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন। এ সময় ১০ম শ্রেণির ছাত্র মোঃ রাশেদুল হাসান জানান, শ্রেণীকক্ষে প্রধান শিক্ষকের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় তিনি একজন ছাত্রীকে প্রহার করেছেন। তিনি বিদ্যালয়ে বেত ব্যবহার করেন এবং আমাদের ছোট ভুলের জন্য প্রধান শিক্ষক অনেক বড় শাস্তি দেন।
প্রধান শিক্ষকের আচরণ শিক্ষক সুলভ নয় জানিয়ে ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী আনিকা রহমান জানান, তার দরখাস্তে একটা ভুলের জন্য প্রধান শিক্ষক তাকে সবার সামনে অপমান ও বিদ্যালয়ের কলঙ্ক বলেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ সফিউল আযম স্বপন জানান, গতকাল শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিসমিল্লাহ বলা নিয়ে তাদের ধমক দেয়ার অভিযোগ করেছে। আমি আজ পৌনে ১০ টায় বিদ্যালয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের ডেকে এনেছি। সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ, শ্রেণীকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করা, মোবাইল ফোন ব্যবহার, কথায় কথায় বেত্রাঘাতের অভিযোগ করে। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এলে সকল শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা তাঁকে প্রতিরোধ করে। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করে প্রধান শিক্ষককে অফিসে এনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনি। এ সময় সবাই একযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবী করেন। আমরা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় পরিচালনা কমিটির সভা আহবান করি। এক পর্যায়ে তিনি বিদ্যালয় থেকে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দেবনাথ জানান, তিনি কোন ধর্ম অবমাননা করেননি। শিক্ষার্থীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। বিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা পালনে কঠোর হওয়ায় কিছু শিক্ষকের ইন্ধনে ছাত্ররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ব্যাপারে মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবদুল মান্নানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি গনমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.