পাবনা সংবাদদাতা:
পাবনা সাঁথিয়া মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের শাস্তি না হওয়ায় আবার আন্দোলন শুরু করেছে। রোববার থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয়দফার এ অন্দোলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
সোমবার প্রধান শিক্ষক বিজয় দেবনাথকে অফিস রুমে আটকে তালা লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে অন্যান্য শিক্ষকদের অনুরোধে ছাত্রছাত্রীরা তালা খুলে দেয়। সোমবার অভিযোগকারিনী শিক্ষার্থীদ্বয়ের সাক্ষাৎকার নিতে স্কুলে আসেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন। তিনি স্কুল ত্যাগ করার পর পরই ছাত্রছাত্রীরা প্রধান শিক্ষক বিজয় দেবনাথের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীকে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় দেবনাথ ও সহকারী শিক্ষক বাবুল কুমার পাল এর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষার্থীরা পুনরায় ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের দু’জন ছাত্রীকে যৌন হয়রানী ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার প্রতিবাদে গত মে মাস থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করছে। সাঁথিয়া পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় দেবনাথের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী এবং সহকারী শিক্ষক বাবুল কুমার পালের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর যৌন হয়রানীর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগের বিচার বিলম্বিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন ও মিছিল করে।
অভিযোগ তদন্ত করার জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উক্ত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মনিরুজ্জামানকে। একই ঘটনায় পাবনা জেলা প্রশাসক এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আফরোজা আখতারকে দিয়ে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মনিরুজ্জামান এর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে ছাত্রীদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। উক্ত তদন্তের ভিত্তিতে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে উক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর সুপারিশ প্রেরণ করেন।
শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করে। তদন্তে ছাত্রীদ্বয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মোঃ নেহাল আহমেদ গত ২৬ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ প্রেরণ করেন।
এরপর এক মাস গত হলেও উক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা পুনরায় আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে বলে সরেজমিনে ঘটনাস্থালে গিয়ে জানা গেছে।
গত রোববার দুটি ক্লাস করার পর শিক্ষার্থীরা উক্ত শিক্ষকদ্বয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। তাদের অপসারণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মানবন্ধন করে। শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দিয়েছে ৭ দিনের মধ্যে চরিত্রহীন শিক্ষকদ্বয়ের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তারা উক্ত দুই শিক্ষককে স্কুল আঙিনায় প্রবেশ করতে দিবে না।