রাজবাড়ী সংবাদদাতাঃ
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রায় কোন প্রকার ভোগান্তি থাকবে না দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহারকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের। কোন রকম সিরিয়ালে না থেকে সরাসরি এসে ফেরিতে উঠছে যানবাহন। এতেকরে এবারই প্রথম কোন রকম দূর্ভোগ ও অপেক্ষা ছাড়াই ঈদযাত্রা সম্পন্ন করতে পারবে দক্ষিণঞ্চলের মানুষ।
আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ঘাট ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেরা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তফা মুন্সি, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিআইডবিøউটিসি ও বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকর্তা, বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধি এবং সং্িশ্লষ্ট বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ।
জানা যায়, পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে এবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে চলাচল করবে ২১টি ফেরি। এছাড়াও চলবে ২২টি লঞ্চ। প্রয়োজনে লঞ্চ ও ফেরি বাড়ানো হবে।
বিগত বছরগুলোতে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঘাট এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে গত ২৫ জুন দক্ষিণবঙ্গের অপর নৌপথ মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর পাল্টে যায় দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। অতীতে দৌলতদিয়ায় মহাসড়কে ফেরির অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা থাকতো যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়ালে। আর বর্তমানে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকে ফেরি। ফলে এবারের ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি থাকবে না বলে ধরনা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে পদ্মার তীব্র স্রোতে ব্যহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। সেই সাথে ঢাকামুখি কোরবানির পশুবাহি ট্রাকের চাপ বেড়েছে দৌলতদিয়ায়। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহি বাস ও পশুবাহি ট্রাক পারাপার করছে কর্তৃপক্ষ। এতেকরে দৌলতদিয়ায় মহাসড়কে শতাধিক সাধারন পন্যবাহি ট্রকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলও স্বাভাবিক থাকবে। যানবাহন কমে যাওয়ায় লঞ্চে আগের মত যাত্রীদের চাপ নাই।
দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী নজরুল ইসলাম, সাইদুল ইসরাম, আমজাদ হোসেন, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এখন যেহেতু দৌলতদিয়ায় কোন ভোগান্তি নাই, তাহলে ঈদেও ভোগান্তি হবে না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে দৌলতদিয়ার ভোগান্তি দুর হয়েছে। আর আগের মত সিরিয়ালে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারছেন।
ট্রাক চালক ইয়াছিন মোল্লা বলেন, ৫ থেকে ২০ ঘন্টা, আবার কোন কোন সময় দিনের পর দিন দৌলতদিয়ায় ফেরির জন্য অপেক্ষায় থেকে অতীতে অনেক কষ্ট করেছেন। তবে এখন আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। দ্রæত ফেরির নাগাল পাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর কারণে তাদের মত ট্রাক চালকদের খুব সুবিধা হয়েছে। ঈদে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী গরুবাহী ট্রাকের গরুর মালিক শিপন শেখ বলেন, গত বছর ঘন্টার পর ঘন্টা দৌলতদিয়া আটকে থেকেছেন। অনেক সময় গরমে গরু অসুস্থ্য হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এবার সরাসরি এসে ফেরি পেয়েছেন। কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় নাই।
ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভার সভাপতি গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন জানান, আসন্ন ঈদে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারীরা যাতে কোন ভোগান্তির শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে যাতে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সে লক্ষ্যে কঠোর নজরদারি করা হবে। এছাড়া মহাসড়কে কোন প্রকার ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হবে না।