সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ
গাইবান্ধা জেলার আওতাধীন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার ভাঙন খেলায় দিশেহারা এখানকার শত শত পরিবার। অব্যাহত ভাঙনে গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই। প্রতি বছর ভাঙছে তো ভাঙছেই। হচ্ছে না কোনো স্থায়ী সমাধান।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তায় ক্রমেই বাড়ছে পানি। সেইসাথে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষের বসতভিটাসহ ফসলি জমি। ভাঙনের মুখে রয়েছে হাজারও একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার পানি বর্তমানে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর চন্ডিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র হয়েছে ভাঙন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের তথ্যমতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০টি পরিবার এবং ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উজানের ঢলে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় কমপক্ষে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব পরিবার আশ্রয় কেন্দ্র এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
হরিপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়া জানান, পানি এখনও ঘরের ভিতরে উঠেনি। তবে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে করে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে যাবে। তিনি আরও বলেন গত এক সপ্তাহের নদী ভাঙনে তার ৩ বিঘা জমি উঠতি তোষাপাটসহ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনজু মিয়া জানান, তার ইউনিয়নের কমপক্ষে ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। অনেক পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে গোটা চরাঞ্চলের কমপক্ষে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভাঙন ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় হাজারও পরিবার ভাঙনের সন্মুখিন হয়ে দাড়িয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া চরাঞ্চলে চলাচল দূরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিকট হতে পানিবন্দি ও নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়নি। ইতিমধ্যে বানভাসিদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া মজুত রয়েছে ১০ মেট্রিক টন চাল।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, তিস্তায় পানি বাড়ছে। এখনও সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় বানভাসিদের সহায়তায় সকল রকম প্রস্তুতি রয়েছে