বিল্লাল হোসেন, যশোর থেকেঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন যশোরের বাঘারপাড়ার যুবক ইব্রাহিম হোসেন। সোমবার (৫ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ইব্রাহিম হোসেনের (২৭) দগ্ধ মরদেহ পৌঁছেছে তার বাড়িতে। বাড়িতে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তার স্বজনরা। কান্নার রোলে পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে রয়েছে। রীতিমতো শোকের মাতম চলছে।
চিৎকার কাঁদতে কাঁদতে ইব্রাহিমের মেঝ বোন সেলিনা আর ছোট বোন হালিমা বলছিলেন, ভিডিও করতি করতি কী একটা ছুটে আসে আমার ভাইয়ের মাথায় লাগে রে…। মা কোয়ে চিল্লান দিয়ে আর কথা কোয়নি আমার ভাইরে। আমার ভাই কী করে ফুরোয় গেলো রে। ভাইতো আর আসবে না কোনো দিন রে।গত শনিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত হন ইব্রাহিম হোসেন।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আবুল কাশেম মুন্সীর ছোট ছেলে ইব্রাহিম।তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের শিপিং সহকারী পদে চাকরি করতেন।
মরদেহ বহন করে আনা চট্টগ্রামে একই প্রতিষ্ঠানের অন্য শাখায় কর্মরত তার খালাতো ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, শনিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ইব্রাহিম আগুনে দগ্ধ হন। তার আগে তিনি বাড়িতে মা, বাবা, স্ত্রীসহ স্বজনদের সাথে কথা বলেন।
তিনি জানান, ইব্রাহিমের মাথার পেছনে ও পেটে আঘাত ও আগুন লাগে। তার মুখ, টি-শার্ট আর সেলফোন দেখেই মরদেহ শনাক্ত করা হয়। যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন ফোন সচল ছিল।
নিহতের আরেক খালাতো ভাই শিমুল হোসেন জানান, শনিবার রাতে অনেকের মতো ইব্রাহিম অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। কিছু সময় পর হঠাৎ ডিপোর কনটেইনারগুলোতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজাখুঁজির পরদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহের সন্ধান মেলে।
এদিকে, রবিবার সকাল থেকেই প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। ছেলের অকাল মৃত্যুতে বিলাপ করছেন মা দুলুপি বেগম ও বাবা আবুল কাশেম। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে স্ত্রী মুন্নি খাতুন যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ভাই-বোনসহ অন্যান্য স্বজনদের গগণবিদারী আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠছে।মুন্নী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। জুলাই মাসের ২৮ তারিখে তার সন্তান ভূমিষ্টের দিনক্ষণ দিয়েছেন।
ইব্রাহিমের মা জানান, শনিবার রাত ৯টায় তার সাথে ফোনে তাদের শেষ কথা হয়। কোরবানি ঈদে বাড়ি এসে সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলো সে। ছেলে সন্তান হলে মাদরাসায় পড়াতে চেয়েছিলো, হাফেজ বানাবে।
জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু জানান, পাঁচ বছর আগে প্রাণ আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি পান ইব্রাহিম। দেড় বছর আগে নিজ গ্রামেই বিয়ে করেন। ইব্রাহিম মারা যাওয়ার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।নিহতের পরিবার জানায়, আজ সকাল ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।