গোয়ালন্দে বিষাক্ত তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষক, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও

কৃষি ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী থেকেঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দেশী-বিদেশী টোবাকো কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বিষাক্ত তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তামাক চাষ মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষিরা।

উপজেলার উজানচর, ছোটভাকলা, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় দিনে দিনে ব্যাপক হারে তামাক চাষ বাড়ছে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘদিন তামাক চাষে জমিতে অন্য ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ করছে চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে মতে, গোয়ালন্দ উপজেলার পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩হেক্টর আবাদি জমিতে বিষাক্ত তামাক চাষ করা হয়েছে এর মধ্যে উজানচর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী।

তবে সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় উপজেলার দূর্গম এলাকা গুলোতেও বর্তমানে কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে তামাক চাষের পরিমান আরো বেশী রয়েছে। উপজেলার এসব ইউনিয়ন গুলোতে টোবাকো কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে চাষিদের দিয়ে তামাক চাষ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় তামাক চাষিরা জানান, জমিতে খাদ্য শষ্য রোপণ করে খুব বেশী লাভবান হতে পারিনি। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে বীজ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ মোট ব্যয় হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। যার একটা অংশ সহজ শর্তে ব্যয় করেন টোবাকো কোম্পানি গুলো। দামও ভালো পাওয়া যায়, লোকসানের কোন সম্ভাবনা নেই। এ কারনেই চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুকছেন বেশী।

উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দি পাড়ার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষে প্রচুর পরিশ্রম ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তবুও বিষাক্ত তামাক চাষ করছি। কারণ তামাক পাতা চাষ ও বিক্রি নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই এবং লোকসানেরও সম্ভাবনা নেই।

আরেক কৃষক হাসেম শেখ বলেন, টোবাকো কোম্পানিগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় দের বিঘা জমিতে তামাকের আবাদ করেছি এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তামাক বিক্রি করেছি ৯৬হাজার টাকা এর মধ্যে থেকে টোবাকো কোম্পানির লোকজন কেটে রেখেছে ১২হাজার টাকা তার পরও আমরা লাভবান হয়েছি। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই কৃষকরা ধীরে ধীরে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

অপর কৃষক বাবু খাঁ বলেন, গত বছর বিভিন্ন খাদ্য শষ্য চাষাবাদ করে প্রচুর লোকসান হয় আমার । আমি দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে কৃষি কাজ ছেড়ে যখন অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্ত করছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তে টোবাকো কোম্পানির লোকদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতায় পোনে ৪বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করি। সেই তামাক ১লাখ ৯৯হাজার টাকা বিক্রি করে টোবাকো কোম্পানির টাকাসহ সকলের দেনা শোধ করে এখন আমরা ভালই আছি। আগে বিভিন্ন খাদ্য শষ্য চাষাবাদ করলেও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা তো দুরে থাক তারা আমাদের খোজ খবর পর্যন্ত নেয়নি।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তামাক থেকে জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেটসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্য তৈরী হয়। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের ফলে মুখে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়ে ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক হওয়ার মত ঝুঁকিও থাকে। এছাড়াও যে এলাকায় তামাক চাষ হয়, তার আশেপাশের মানূষেরও শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনুজ্জামান বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর এটা কম-বেশী সবাই জানে। শুনেছি তামাক চাষিরা সিগারেট কোম্পানির সহযোগিতায় সাথী ফসলের সাথে অধিক মুনাফার জন্য তামাক চাষ করে যাচ্ছে। ক্ষতিকর তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি এবং কৃষকদের এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বুঝাচ্ছি। যাতে তারা তামাক চাষ বাদ দিয়ে খাদ্য শষ্য চাষে ফিরে আসেন।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *