পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আবারো সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ ঘোষনার দাবি সন্তু লারমার
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আবারো একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষনার দাবী জানিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করলেও সেই চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়নি। বরং চুক্তি বাস্তবায়ন নামে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নানাভবে বাধাগ্রস্ত করে চুক্তিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যাতে পাহাড়ের জুম্ম জনগন একদিন যে চুক্তির স্বাক্ষর করেছিল সেটা যাতে তারা ভুলে যায়।
শুক্রবার (২০ মে) সকালে “আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদারকরণে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র-জনসাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত সমাবেশে সমাবেশে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমার সভাপতিতেœ বিশেষ অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জয়বায়দা নাসরিন কনা, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবীর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি ও কবি শিশির চাকমা, পিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক জগদীশ চাকমা প্রমুখ।
ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীর কাছে প্রশ্ন রেখে যেতে চাই উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) আরো বলেন, সরকার কি করতে চাই, চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কি করবেনা সেই উত্তর পাহাড়ি জনগণ জানতে চাই? পাহাড়ে উন্নয়ন, ধর্ষণ, আইনশৃঙ্খলা নামে যা কিছু করছে অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে কিনা? পাহাড়ের বুকে আন্দোলন বহু আগে শুরু হয়েছিল। পাহাড়িরা স্বাধীনতা সংগ্রামেও যুদ্ধ করেছিল। ভারত বিভক্তির সময় পাহাড়িরা চেয়েছিল অমুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম হিসেবে ভারতের সাথে সংযুক্ত হতে কিন্তু সেটি হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যাতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেটি পাহাড়ি জনগণ ভূলে যায়।
সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ের বুকে উন্নয়নের নামে অনেক কিছু হচ্ছে কত কথায় না বলে সরকার। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়েছিল। উন্নয়ন বোর্ডের মূল কাজ হলো পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যাকে অর্থনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা যদি পার্বত্য অঞ্চলের দিকে তাকাই তাহলে সে উন্নয়ন কোথায়? আমরা দেখতে পায়নি।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে উন্নয়নের নামে কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি ইত্যাদি তালিকা প্রকাশিত হতে দেখি। কিন্তু উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা। কাপ্তাই বাঁধের ফলে এবং ১৯০০সালের আইনবিধি ভঙ্গ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীও পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর মতো এই পার্বত্য অঞ্চলের ১৪টি পাহাড়ি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অধিকার ও মুক্তির লড়াই সংগ্রামে পাহাড় এবং সমতলের মানুষ সর্বদা জাগ্রত আছে। এই লড়াই সংগ্রামে আমরা সংহতি জানাই। পিসিপির ৩৩ বছর যে অতিক্রম করেছে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সারা বাংলাদেশের পাহাড়ি ছাত্রদের আহ্বান জানান তাঁরা।
এর আগে জাতীয় পাতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ-মিছিল জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে শহরের বনরুপা এলাকা পর্ষন্ত গিয়ে পুনরায় জিমনেসিয়াম মাঠে গিয়ে শেষ হয়।