নিজেস্ব সংবাদদাতাঃ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন ধামগড় ইস্পাহানী বাজার এলাকায় অবস্থিত বিআইডব্লিউটিসি ডকইয়ার্ড-২ এর অভ্যন্তরে বাইতুছ ছালাত জামে মসজিদের ইমাম মাহবুবুর রহমানের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন মুসুল্লীরা। মঙ্গলবার ১০ মে সকালে মসজিদ প্রাঙ্গনে জড়ো হয়ে ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় কয়েক শত মুসুল্লী। এ ঘটনায় সহকারী প্রকৌশলী মো: নাফিজকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে গত ৯ মে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান ও বিআইডব্লিউটিসি ডকইয়ার্ড-২ এর বরাবরে গণসাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ প্রদান করেন মুসুল্লীরা।
অভিযোগে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসি ডকইয়ার্ড-২ এর অভ্যন্তরে বাইতুছ ছালাত জামে মসজিদের ইমাম মাহবুবুর রহমান সরকারি বিধি বর্হিভূতভাবে ঢাকেশ^রী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি সাবালিকা ছাত্রীদের পড়ান যা পর্দার বরখেলাপ। এ বিষয়ে মাদানীনগর মাদরাসা কর্তৃক বোর্ড গঠন করে ইমামকে অযোগ্য ঘোষণা করে ফতোয়াও দিয়েছে। সরকারি নিয়ম বর্হিভূতভাবে স্কুলে শিক্ষকতা করানোর পাশাপাশি সুদভিত্তিক পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সে পার্টটাইম চাকরিও করেন ইমাম মাহবুবুর রহমান। এমপিওভুক্ত স্কুলে ও সুদভিত্তিক পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সে পার্টটাইম চাকরি করার কারণে তিনি মসজিদে প্রতিদিনই জোহর ও আসরের ওয়াক্তে নামাজ পড়ানোর সময়ে অনুপস্থিত থাকেন। এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির লোকজন কিছু জিজ্ঞেস করলে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে ইমাম বলেন আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্যনা। এছাড়া ইমাম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে শুক্রবারসহ বিশেষ দিনগুলোতে মুসুল্লীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দানের অর্থের সঠিক হিসেব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবাদী মুসুল্লীদের অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করা, সরকার বিরোধী আক্রমনাত্মক কথাবার্তা বলা, বহিরাগত লোকদের নিয়ে গভীর রাত অবধি ডকইয়ার্ডের কোয়ার্টার আড্ডা দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন মুসুল্লীরা। মসজিদটির ইমাম বিআইডব্লিউটিসি’র উর্ধ্বতন কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই এহেন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুসুল্লীরা।
মঙ্গলবার সকালে মসজিদের সামনে বিক্ষোভকালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক, বিআইডব্লিউটিসি শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল সেক্রেটারী খন্দকার জাকির হোসেন চুন্নু মাস্টার, সহকারী জেনারেল সেক্রেটারী সামছুজ্জামান, বাইতুছ ছালাত জামে মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মো: আব্দুল আউয়াল, সহ সম্পাদক শাহআলম, ক্যাশিয়ার আলফাজ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক মো: সারোয়ার, মো: আক্তার হোসেন, মো: ইমরান, সোহেল প্রধান, আবু সাঈদ, সালাউদ্দিন, মিজানুর রহমান, সাজ্জাদ হোসেন, খোরশেদ আলম, আবু তাহের, মো: আনিছ, আব্দুল কাদির, সিরাজুল ইসলাম, মো: হোসেন, স্বপন মাহমুদ, বিল্লাল হোসেন, আব্দুল জলিল প্রমুখ।
ইমাম মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তিনি বাইতুছ ছালাত জামে মসজিদে ইমামতি ছাড়াও ঢাকেশ্বরী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তবে তিনি পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সে চাকুরী করেন না। ইমামতির পাশাপাশি শিক্ষকতা চাকুরী নিয়মের পরিপন্থি কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি খন্ডকালীন ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি ইমামের পূর্ণ বেতন পাননা। এ কারণেই তিনি পার্টটাইম শিক্ষকতা করছেন। তিনি চাকুরী নিয়ম মেনেই দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করছেন বলে দাবি করেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়ান এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি ডকইয়ার্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, মসজিদের ইমাম সাহেব সরকারি নিয়ম মোতাবেক মসজিদে ইমামতি করাকালীন অন্য কোথাও চাকরী করতে পারবেনা। এটা চাকরী বিধির পরিপন্থী। এর আগে কি হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। আমি সকালে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে মুসুল্লীদের বিক্ষোভের খবর আমি শুনেছি। এ ঘটনায় সহকারী প্রকৌশলী মো: নাফিজ হোসেনকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবেন। সেই রিপোর্টের আলোকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।