দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির হিসাবে বিশ্বে কোভিড-১৯-এ মোট মৃত্যু দেশগুলোর সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে তিন গুণ বেশি। খবর রয়টার্স ও বিবিসির
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৯ হাজার ১২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৫ দিন ধরে করোনাভাইরাসে মৃত্যুশূন্য রয়েছে দেশ। আর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৭২ জন। ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর এই সংখ্যা অন্তত ৮৪ হাজার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু হয়েছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটি–পিসিআর পরীক্ষা অপরিহার্য। আমরা মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছি, তা ওই পরীক্ষার ভিত্তিতে। অনুমান করে আমরা কোনো তথ্য দিইনি। তা ছাড়া বেশি মৃত্যু হলে দেশের মানুষ তা বলত, দেশের গণমাধ্যম তা তুলে ধরত। এখনো সেই অভিযোগ কেউ করেনি।’
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে দেশে সরকারিভাবে যত মৃত্যুর সংখ্যা জানানো হয়েছে, প্রকৃত মৃত্যু তার চেয়ে ৯৫ লাখ বেশি। প্রকৃত মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ। এই সময়ে সরকারিভাবে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৪ লাখের কিছু বেশি ছিল।
সরকারিভাবে ১০ হাজারের বেশি মৃত্যু দেখানো হয়েছে—এমন দেশগুলোর মধ্যে মিসরে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা ১১ দশমিক ৬ গুণ বলে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এরপর ভারতে সরকারিভাবে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে ৯ দশমিক ৯ গুণ মৃত্যু হয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় মৃতের সংখ্যা কম এসেছে। এমনকি মহামারি-পূর্ব পরিস্থিতিতে প্রতি ১০টি মৃত্যুর মধ্যে গড়ে ৬টি নিবন্ধিত হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ‘বাড়তি মৃত্যু’ হয়েছে সরাসরি কোভিড–১৯ এবং অতিমারির পরোক্ষ প্রভাবে। করোনা অতিমারি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনাভাইরাসে সংক্রমিত না হওয়া রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এ কারণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মৃত্যুর কারণ অতিমারির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়া অতিমারির সময় যেসব মৃত্যু এড়ানো যেত, সেসব মৃত্যুও এতে যোগ করা হয়েছে। যেমন বিধিনিষেধের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হওয়া মৃত্যু। যদিও সে সময় এসব মৃত্যুর ঝুঁকি কম ছিল।
ডব্লিউএইচও বলেছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেওয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে। একই সঙ্গে তারা পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেছে। তবে ডব্লিউএইচও যে পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছে ভারত।
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বের করার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বে ছিলেন সামিরা আসমা। ডব্লিউএইচওর এই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিষয়টি মর্মান্তিক। সংখ্যাটি বিস্ময় জাগানোর মতো। করোনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।