কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা এলাকার সাড়ে তিন শতাধিক গ্রাহকের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তিন গ্রামের অন্তত ৩শত ৬৫টি পরিবার।
বুধবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানী অভিযান শুরু করে উপজেলার পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের ছায়কোট এলাকায়। এসময় অন্তত একশ মিটার গ্যাস পাইপ উঠিয়ে নেয় তারা। এতে ছায়কোট, তুলাতলী ও হারং গ্রামের প্রায় ৩৬৫ পরিবারের বৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। ছায়কোট এলাকার বাসিন্দা হাজী মনু মিয়া জানান, আমরা গ্যাসের জন্য ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ২ কপি ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, জমির মালিকানা খতিয়ান/দলিল এর ফটোকপি ও পৌরসভা গ্যাস সংযোগের ছাড়পত্রসহ কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানীতে আবেদন করি।
আবেদনের প্রেক্ষিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী একাধিক জরিপ করে আমাদের ফাইল অনুমোদন দিয়ে আমাদেরকে চাহিদাপত্র দেন। ওই চাহিদাপত্রের টাকা আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করি। বাখরাবাদের লোকজন গাড়ি নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে রাইজার উঠায়। পরবর্তীতে আমাদেরকে রেগুলেটর দিয়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি চুক্তিপত্র ও বিল বই প্রদান করেন। গত ৬ মাস পূর্বে এলাকার সকল গ্রাহকের বিল বই অনলাইন করা হয়। তারপর থেকে আমরা ব্যাংকে অনলাইনে বিল পরিশোধ করি।
ওই গ্রামের গ্রাহক আলী হোসেন জানান, গত দুই বছর আগেও আমার বিল বকেয়া থাকায় বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানী বিল বকেয়া আছে মর্মে আমাকে চিঠি দেয়। আমি পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচন করার জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাখরাবাদ গেলে তারা আমাকে গ্যাস বিল পরিশোধ সংক্রান্ত প্রত্যয়ণপত্রও দেন। এতো কিছু থাকার পর আমাদেরকে কিভাবে অবৈধ গ্রাহক বলা হচ্ছে তা কিছুই বুঝতে পারছি না।
গ্যাস লাইন বিছিন্ন করতে আসা কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর উপ-মহা ব্যবস্থাপক (কমন সার্ভিস এন্ড প্রটোকল ডিপার্টমেন্ট) মো. শাহানূর আলম ও উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ভিজিল্যান্স) প্রকৌ. ছগীর আহমেদ জানান, এই লাইনটি অবৈধ। আমাদের কোম্পানী ওই লাইন নির্মাণ করেনি।
গ্রাহকদের সকল কাগজপত্র উপস্থাপনের পর তারা বলেন, যারা অবৈধভাবে ওইসব লাইন নির্মাণ করেছে তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গ্রাহক এমরান হোসেন জানান, আমাদের কাগজপত্র নিয়ে আমরা গত এক মাস পূর্বে বাখরাবাদ গ্যাস অফিসে গেলে তারা আমাদের প্রত্যেকের কাগজপত্রের বিপরীতে অফিসে পৃথক ফাইল দেখতে পান। তখন আমাদের লাইনের গ্রাহকের ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, মাত্র ২/৩দিন পর পবিত্র রমজান শুরু। আর রমজানের এই মুহুর্তে হঠাৎ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় সাড়ে তিনশত গ্রাহকের পরিবার বিপাকে পড়বেন। এমনও পরিবার আছে তাদের ঘর ছাড়া বাহিরে জায়গা নেই যে রান্না করে খাবে।
এ ব্যাপারে চান্দিনা পৌর মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূইয়া জানান, বুধবার দুপুরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই তখন আমাদের উপস্থিতিতে গ্রাহকের কাগজপত্র দেখতে চান কর্মকর্তারা। সকল গ্রাহক তাদের কাগজপত্র উপস্থাপন করতেও সক্ষম হয়েছে। গ্রাহক আবেদন করেছে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য বাখরাবাদ ওই আবেদন গ্রাহন করে সংযোগ প্রদান করেছেন। এখানে কোন লাইন বৈধ আর কোনটা অবৈধ সেটার যাচাই করার ক্ষমতা গ্রাহকের নেই। অপরদিকে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে হঠাৎ পাইপ উঠিয়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাটা অমানবিক।