নার্সরা স্বাস্থ্যসেবার মেরুদণ্ড

কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ সারাদেশ স্বাস্থ্য
শেয়ার করুন...

মোসাম্মৎ স্বপ্নাহার বেগমঃ প্রতিটি রোগীর স্বাস্থ্য নার্সের কাজের উপর নির্ভর করে।
নার্স (নার্স) – নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, উপস্থিত চিকিৎসকের একজন পেশাদার সহকারী।
চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসার পরামর্শ দেন,ইনজেকশন দিন, আইভি লাগান, ক্ষতটি ব্যান্ডেজ করুন, ওষুধ দিন, তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন ইত্যাদি। এই সমস্ত কাজগুলো নার্স দ্বারা করা হয়। প্রায়শই নার্স চিকিৎসকের চেয়ে রোগীদের সাথে যোগাযোগ করে। এবং চিকিৎসার সাফল্য তার দক্ষতার উপর নির্ভর করে।
চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা একত্রে কাজ করেছেন। মিডওয়াইফরাও মায়েদের সাহায্য ও সন্তান জন্মদানে সহায়তা করছেন। নবজাতক শিশুদের পৃথিবীর আলো দেখাতে কার্যকরি অবদান রাখছেন। তাই নার্সরা স্বাস্থ্যসেবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এটি শুধুমাত্র ফ্লোরেন্সের প্রতি সম্মান প্রদশর্ন করে না, অবশ্যই নার্স ও মিডওয়াইফদের রোগীদের কল্যাণে কাজের প্রতি স্বীকৃতি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ক্যাম্পেইন সকল স্বাস্থ্য হিরোদের অর্থাৎ নার্স ও মিডওয়াইফদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। যাতে করে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ। কমানো যায়। নার্সরা স্বাস্থ্যসেবার মেরুদণ্ড, তারা মানসম্মত সেবা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ কমাতে পারে। স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় ৫৯ শতাংশ নার্স। সুতরাং তাদের ভূমিকাটা জোরালো।
হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইপিসি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের সমন্বয়ে একটা টিম গঠন করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে কিছু নিবেদিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদের নিয়ে আইপিসি কমিটি গঠন করতে হবে। নার্সদের আইপিসি কার্যক্রমের মূলকেন্দ্রে রাখতে হবে এবং কার্যক্রম জোরদার ও উন্নীতকরণে নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবা নার্সকেন্দ্রিক এবং তাদের সাথে রোগীদের সাক্ষাৎ বেশি হয়।
যেহেতু নার্সরা স্বাস্থ্যের প্রতিটি ক্ষেত্র প্রতিফলিত করে সেজন্য আইপিসি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং নিত্য নতুন তথ্য নার্সদের দেয়া প্রয়োজন। নার্সরা অনন্য সহকর্মীদের আইপিসি সংক্রান্ত ট্রেনিং ও শিক্ষা প্রদান করবেন। অনেক দেশে আইপিসি পেশাদারিরা নার্স। আবার অনেক দেশ পোস্ট গ্রাজুয়েশনের কারিকুলামে আইপিসি অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং আইপিসিতে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য কাজ করছে। নার্সরা রোগীদের হ্যান্ড হাইজিন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শিক্ষা দিতে পারবেন।
নার্সরা সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গুরুত্বারোপ করতে পারেন। যে পাঁচটি মুহূর্তে হাত ধৌত করতে হবে ঐ সব মুহূর্তে তা হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কখন গ্লাভস পড়বে, কখন পড়বে না এজন্য একটি তদারকি টিম গঠন করতে হবে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যেসব বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে সেসব মেডিকেল বর্জ্যগুলো উৎপাদন স্থলে আলাদা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন রংয়ের পৃথক পৃথক পাত্র রাখা যাবে। যেমন-
সাধারণ বর্জ্য- কাল
ধারালো বর্জ্য- লাল
ইনফেকশাস বর্জ্য- হলুদ
তরল বর্জ্য- নীল
পুনঃব্যবহার্য- সবুজ
তবে অনুরূপ বর্ণের পাত্র পাওয়া না গেলে বর্জ্যের নাম লেভেলিং করে আলাদা ময়লার পাত্র ব্যবহার করতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, হাসপাতালে উৎপাদিত বর্জ্যের ৮০ শতাংশ সাধারণ বর্জ্য, বাকিগুলো মেডিকেল বর্জ্য। এসব বর্জ্য আলাদা করতে হবে। অধিকাংশ সময় সাধারণ বর্জ্যের সাথে মেডিকেল বর্জ্য মিশে সবগুলো বর্জ্য ইনফেশাস বর্জ্য হয়ে যাচ্ছে। রোগীদের কোন বর্জ্য কোথায় ফেলবে সে সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
আইপিসি কার্যক্রম তদারকি করাঃ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যে আইপিসি কার্যক্রম চলমান (যেমন- বর্জ্য ব্যবস্থপনা, হাতের স্বাস্থ্যবিধি, হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যন্য কার্যাদি) ঠিকমত চলছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করা এবং মাসিক মিটিংয়ে আলোকপাত করা।
এটা অনস্বীকার্য যে, যথাযথ আইপিসি কার্যক্রমের শয্যা অনুপাতে জনবলের প্রয়োজন। আমরা একটু সচেতন হলে সংক্রমণ কমবে।
নার্সিং পেশা এক সময়ে অত্যন্ত অবহেলিত ছিল। এখন এই পেশার মানোন্নয়ন করে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া থেকে শুরু করে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠান, জেলায় জেলায় নার্সিং কলেজ, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে নার্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণের যত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নার্সদের সার্বক্ষণিক রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। তাদের পরিশ্রমও অনেক বেশি। রোগীর সার্বিক দেখভাল করে তারাই চিকিৎসককে অবহিত করেন। এ প্রক্রিয়াতেই চিকিৎসা নিশ্চিত হয়। স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি একটি টিম ওয়ার্ক। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী- যার যার কাজের জন্য একটি সম্মিলিত পরিপূর্ণ টিম থাকতে হবে। অন্যথায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে না।
ধাপে ধাপে এগিয়েছে নার্সিং পেশা :স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রহিমা খাতুন, সাহাজাদী হারুন, জোহরা বানু, আক্তার বানুর মতো কয়েকজনের হাত ধরে বাংলাদেশে এই পেশার যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় নার্সিং পেশাকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নার্সিংয়ের জন্য পৃথক প্রশাসন কাঠামো তৈরি করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই নার্সিং পেশার সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীতকরণ এবং প্রথম শ্রেণির পদ সৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এমএসসি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

লেখক-
নার্সিং কর্মকর্তা,
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,কুমিল্লা।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.