পানি আল্লাহর অশেষ নিয়ামত :দূর্বারবিডি

ইসলামিক
শেয়ার করুন...

মো: আবু তালহা তারীফ : পানি জীবনের একটি উৎস ও আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশাল একটি নিয়ামত। দুনিয়ার জমীনে এবং আখিরাতে পানির বিশিষ্ট ভূমিকা থাকায় পবিত্র কোরআনে পানিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ৪৬টি স্থানে পানির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। আকাশ, মাটি সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তায়ালা পানি সৃষ্টি করেছেন। পানি থেকেই মহান আল্লাহ তায়ালা সব প্রানবন্ত বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবন্ত বস্তুকে সৃষ্টি করেছি’। (সূরা আম্বিয়া-৩০)

পানি শুধু জীবনের উৎস নয়, মহান আল্লাহ তায়ালা যে ইবাদত করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল পবিত্রতা, পবিত্রতার প্রথম ও প্রধান উপকরন হল পানি। এই পানি আল্লাহ মানুষের প্রশান্তির জন্য আকাশ থেকে অবতরন করেন যাতে মানুষ পবিত্র হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরন করেন যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের পবিত্রতা”। (সূরা আনফাল-১১)

পানি ব্যতিত এই সুন্দর বায়ুম-ল অস্তিত্বহীন হয়ে যেতো। তাই পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানি অবদান অনস্বীকার্য। পানির মাধ্যমে বৃক্ষ জন্মে এবং যার মাধ্যমে আমরা পশুচরন করে থাকি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন ওতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে বৃক্ষ জন্মে যাতে তোমরা পশুচারন করে থাক”। (সূরা নাহল-১০) পানি জান্নাত বাসীদের উপহার দেওয়া হবে ও জাহান্নাম বাসীদের পানি থেকে বঞ্চিত করা হবে। জাহান্নাম বাসীরা তাদের অত্যাচারের কষ্টে পানির পিপাসায় পরে জান্নাতি ব্যক্তিদের নিকট পানি চাইবে, কিন্তু তারা যেহেতু অবিশ্বাসী তাই তাদের পানি দেওয়া হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ডেকে বলবে দোযখবাসীরা জান্নাত বাসীদেরকে, আমাদের উপর কিছু পানি বা খাদ্য ফেলে দাও বা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যা দিয়েছেন তা হতে, তারা বলবে আল্লাহ তায়ালা এই দুটি অবিশ্বাসীদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন”। (সূরা আরাফ-৫০)

পানি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে অপচয় হচ্ছে। পানি আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত এজন্য পানি অপচয় করা মহান আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। পানি অপচয় করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মারাত্মক গর্হিত কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আহার করো ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না, তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না”। (সূরা আরাফ-৩১) রাসুল (সা:) পরিমানমত পানি ব্যবহারের নির্দেশে দিয়েছেন। পরিমান মত পানি ব্যবহার করা, ওজু, গোসল কিংবা বিভন্ন ধরনের কাজ করতে হবে। গোসল করার সময় আমরা মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করি, আবার মসজিদের ওজু করতে গিয়ে পানির ট্যাপ ছেড়ে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে ওজু করি, মাথা কান গর্দান মাসেহ করার সময় যদি পানির ট্যাপ বন্ধ রাখি এবং স্বাভাবিক ভাবে ট্যাপ ছেড়ে ওজু করলে পানির অপচয় থেকে রা পাওয়া যাবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, “রাসুল (সা:) একসময় হজরত সাদ (রা:) এর কাছে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। হজরত সাদ (রা:) তখন অজু করেছিলেন। রাসুল (সা:) বললেন, পানি অপব্যয় করছ কেন? হজরত সাদ (রা:) বললেন, ওজুতেও পানি কি অপব্যয় হয়, রাসুল (সা:) বললেন, প্রবহমান নদীতেও যদি তুমি অজু কর তবুও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না”। (মুসনাদ আহমদ)

কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তায়ালা সব নেয়ামত সম্পর্কে একে এক করে হিসাব নিবেন এবং পানির ব্যবহার সম্পর্কে হিসাব চাওয়া হবে। আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতারা এই পানি ব্যবহার সম্পর্কে লিখে রাখছেন, সামান্য অপচয় করলেও সেদিন হিসাব দিতে হবে। যেহেতু প্রতিিিট বিষয় আল্লাহর দেওয়া ফেরেশতারা লিপিবদ্ধ করে রাখছে তাই আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ মেনে চলে তার প্রদত্ত রিজিক থেকে খেয়ে ও পান করতে হবে। এই পৃথিবীর জমীনে কোনো অবস্থাতে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক আমাদের আদেশ করেছেন, তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে খাও এবং পান করো কিন্তু পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না”।

পানি কিভাবে পান করতে হবে সেই আদব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) শিক্ষা দিয়েছেন। বসে ডান হাত দিয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে পানি পান করা রাসুল (সা:) এর সুন্নাত। তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম ও প্রত্যেক বার পাত্র থেকে মুখ পৃথক করা পাত্রের ভিতরে শ্বাস কিংবা ফুঁক না দেওয়া, পানি পান করার পর দোয়া পড়তে হবে, পানি পান করার শেষ হলে পড়তে হবে আলহামদুলিল্লাহীল্লাজী জা আলাহু আ জবান ফরাতান ওয়ালাম ইয়াজ আলাহু মিলহান উজাজান। চা, কফি কিংবা পানীয় জাতীয় পান করলে পড়বে আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফীহী ওয়াজিদনা মিনহু। রাসুল (সা:) পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয় বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ্য রাখার নিদর্শন। রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্রকে ঢেকে রাখ এবং বাসনগুলোকে উল্টে রাখো’। (মুসলিম শরীফ)

পানি ব্যবহারের নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে ইসলামে সীমাবদ্ধ নয়, ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যের পানি পান করানোর তাগিত দিয়েছে এবং এটি একটি পূন্যের কাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্নিত রাসুল (সা:) বলেছেন,“ একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা পেল, সে কূপে নেমে পানি পান করল, পানি পান করে বের হয়ে সে দেখতে পেল একটি কুকুর হাপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল কুকুরটিরও আমার মত পানির পিপাসা পেয়েছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং স্বীয় মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। মহান আল্লাহ তার কাজে উপর সন্তুষ্ট হলেন এবং তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দিলেন। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর প্রিয় রাসুল (সা:) চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলে সাওয়াব হবে? রাসুল (সা:) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করালেই পূণ্য পাওয়া যাবে”। (মুসলিম শরীফ)৷


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.