সংবাদ প্রকাশের জেরে কুড়িগ্রামে ডিসিকান্ডে নির্যাতিত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বিনা অপরাধে মোবাইল কোর্টের নামে ধরে নিয়ে নির্যাতন, সম্মানহানি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাভোগ করানোয় তাকে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ওই ঘটনায় জড়িত সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনসহ জড়িত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়েছে বিএমএসএফ। সাংবাদিকদের মর্যাদা, দাবি ও অধিকার আদায় ভিত্তিক জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছে।
শনিবার ১৪ আগষ্ট গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএমএসএফ এই দাবি করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিক রিগানকে নির্যাতনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভাগীয় মামলায় যে বিচার করা হয়েছে তা লঘুদন্ড ও বিচারের নামে প্রহসনের নামান্তর। সরকারকে বিষয়টি পুণ:বিবেচনা করারও আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বিনা অপরাধে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতন ও ভ্রাম্যমান আদালতের নামে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনার বিভাগীয় মামলায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনসহ সকল আসামী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দন্ডের আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। দন্ডসমূহ: ১. সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন এর বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ২ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
২. এনডিসি রাহাতুল ইসলামের ৩টি ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে।
৩. আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে ডিমোশন দিয়ে নিম্নধাপে নামানো হয়েছে।
৪. সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়েছে।(তবে রিন্টু বিকাশ চাকমার চাকুরিচ্যুতির প্রজ্ঞাপন জারি এখনও হয়নি)।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ওই সকল বেহায়া, লোভী, অপদার্থ, কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকর্তাদের চাকরীচ্যুতির দাবি করা হয়েছে। আলোচিত ডিসিকান্ডে এটি লঘুদন্ড করা হয়েছে। এটি কোন বিচার হতে পারেনা। সাংবাদিক রিগানকে অকথ্য নির্যাতন, কারাভোগ এবং সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্নের অভিযোগে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করা হয়েছে।
বিএমএসএফের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, সাংবাদিকদের সাথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় এরুপ ঘটনা ঘটেই চলছে। কোনটা প্রকাশ পায় আবার কোনটা প্রকাশ পায়না। তাই রিগানের ওপর ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক; এটি সারা বাংলার সাংবাদিকদের চাওয়া।
প্রসঙ্গত, ডিসি সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিনামে একটি পুকুর সুলতানা সরোবর নামে গড়ে তুলে ছিলো। স্থানীয় লোকজনের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও তিনি গড়ে তোলায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রিগান এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্দ হয়ে ডিসি সুলতানা তার প্রশাসনের একটি বাহিনী তার বাসায় পাঠান।
তিন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত বাহিনী গত বছরের ১৪ মার্চ গভীর রাতে বাংলা ট্টিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে তার বাড়ির দরজা ভেঙে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ডিসি অফিসে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। সেখানে তাকে পাশবিক নির্যাতন করে আধাবোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের দাবি করে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতের নামে কারাদন্ড প্রদান করে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এ ঘটনায় সারাদেশের সাংবাদিকদের প্রতিবাদ ও তোপের মূখে তিনদিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পান সাংবাদিক রিগান। এ ঘটনায ডিসি সুলতানা পারভীনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় রিগানের দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেড়বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।
(খবর বিজ্ঞপ্তি)