অনলাইন ডেস্কঃ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, যৌথভাবে কভিড-১৯ টিকা উৎপাদনে চীনের কোম্পানি সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি হবে।
এদিকে সোমবার বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নিযুক্ত বিশ্ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টিমবন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে ৫৯ কোটি ডলার অনুদান দিয়ে সাহায্য করছে, যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যায়।
টিমবন আরও বলেন, প্রস্তাবিত রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্কের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশগুলোর প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহায়তার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা, যাতে পরিস্থিতি ভালোভাবে পরিচালনার জন্য প্রাসঙ্গিক নীতি ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা যায়।
বিশ্বব্যাংকের ওই পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ১৬টি দেশের জন্য। রিপোর্টে তারা যেসব দেশে শরণার্থী আছে, সেসব দেশে তাদের সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয়। এ কারণে এ প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশ। এই রিপোর্টের সঙ্গে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বাস্তব অবস্থা ও চিন্তাভাবনার মিল নেই।
ড. মোমেন বলেন, বড় ফরমায়েশ দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের আরও সুবিধা দিতে হবে, কাজকর্মে, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমার অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ এ ধরনের ফরমায়েশ কোনোভাবেই পছন্দ করে না কিংবা গ্রহণ করতে পারে না। বরং বড় বড় কথা বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে কীভাবে দ্রুত প্রত্যাবাসন করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে সেটাই সবচেয়ে যৌক্তিক।
তিনি বলেন, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষণিকের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের আশ্রয় দেওয়ার শুরু থেকেই বাংলাদেশ এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তাদের শরণার্থী হিসেবে রেখে দেওয়ার কথা কখনও বলেনি বাংলাদেশ। বরং বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান ও অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা। রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নামে দাতা দেশগুলোর দেওয়া টাকার চেহারা বাংলাদেশ কোনোদিন দেখেনি। রোহিঙ্গাদের নামে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো হয় না। টাকা দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে। ওই সংস্থাগুলো এই টাকা কীভাবে খরচ করে তার হিসাবও বাংলাদেশ পায় না। অথচ দাতারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের জন্য তারা অনেক কিছু করছে, এটা মোটেও ঠিক নয়। যেমন অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া ১৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে সরকার পেয়েছে মাত্র পাঁচ মিলিয়ন ডলার।
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আলাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহে বাণিজ্যিক চুক্তির পাশাপাশি যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী আগস্ট থেকে তুরস্কের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনে যাচ্ছে সিনোফার্ম। আর বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উৎপাদন চুক্তির জন্য এরই মধ্যে চীনের রাষ্ট্রদূত খসড়া সমঝোতা স্মারক চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এই চুক্তি সইয়ের পর উৎপাদন শুরু করতে আরও দুই মাস সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও জানান, সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কেনা শুরুর পর এক মাসে ৭০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেও আসবে। চীনের টিকার বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ জন্য আগেই বাড়তি টিকার সংখ্যা জানতে চেয়েছিল চীন। সেই চাহিদার কথা চীনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ।