শতবর্ষী কালিয়াপুর সহিদিয়া দরবার শরীফে হাজারো ভক্তের জিকির, কান্না, ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে ১১৩ তম ওরশ সম্পন্ন

আরো ইসলামিক কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

দেলোয়ার হোসেন
কুরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে লাকসাম কালিয়াপুর দরবার শরীফের ১১৩ তম পবিত্র ওরশ।

ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষকে সাহিদিয়া দরবারে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। প্রতিবছর স্থানীয় ভক্ত ছাড়াও, ইন্ডিয়ার বিভিন্ন প্রদেশ এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ আসেন শতবর্ষী এই দরবারে।

দরবারের বার্ষিক ওরশ মাহফিল উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ কিয়াম,তরিকতের বয়ান,তবারক বিতরণ ও আখেরী মুনাজাত ছিল অন্যতম।

পীরের সাক্ষাৎ, গুরুত্বপুর্ণ নসিহত শুনার জন্য আসেন তারা। পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সব শ্রেণীর লোকের সমাগম ঘটে এখানে।

নারীরা নির্ধারিত স্হানে পর্দার অন্তরালে সমবেত হয়ে নসিহত শুনেন।

দিনব্যাপী এই ওরসে প্রতি ওয়াক্তই কয়েক হাজার মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয়। পীর সাহেবের বাড়ির উঠোনে পাটিতে বসে মাটির পাত্রে খান ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাকসাম উপজেলার কালিয়াপুর গ্রামের মরহুম শাহসুফী মোল্লা কাজিমুদ্দিন (রহ) একজন ধর্মীয় সাধক ছিলেন। ধর্মপালনের পাশাপাশি তার মধ্যে মানুষের সমস্যা সমাধানের মত আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল। এই কেরামতির কথা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ভিড় জমাতে থাকেন। ভক্তদের সংখ্যা বাড়লে তার নিজ বাড়িতে ওরশ শুরু হয়। বর্তমানে ১১৩ তম (প্রতি বছরে একবার) ওরশ চলছে এই দরবারে। শাহসুফী মোল্লা কাজিমুদ্দিন( রহ:) আব্দুর রহমান (রহ:) সহিদউল্লাহ্ খান (রহ:) এর মাজার, বর্তমান পীরের আতিথেয়তায় খুশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

ত্রিপুরা থেকে আসা মো. এক ভক্ত জানান, ১০ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবারে আসি। এ বছর পীরের বাড়ির মেহমানদের খাবারের জন্য ৭৫ মণ গরু ও মহিষের মাংস রান্না করা হয়েছে ।
আমরা প্রায় ১০ জন এক সঙ্গে এসেছি, ভিসা জটিলতার কারনে অনেকেই ভারত থেকে এ বছর আসতে পারেনি।

শাহরাস্তি থেকে আসা রাসেল নামে এক ভক্ত বলেন, ছোট বেলা থেকে এই দরবারে আসি। এখানে আসলে আমাদের ভালো লাগে।

আব্দুল মালেক নামের আরেক ভক্ত বলেন, ছোট বেলা বাবার সঙ্গে এই দরবারে আসতাম। তখন বর্তমান পীর সাহেবের পিতা শহিদুল্লাহ খান (র:) ছিলেন। তখন থেকে দেখেছি এখানে অনেক মানুষ আসে। প্রতিবছরই নতুন নতুন মানুষকে দেখা যায় এখানে।

আরিফ, রবিউল ইসলাম, ছালাম মোল্লাসহ কয়েকজন বলেন, দরবারে এসে আমরা প্রথমেই মোল্লা কাজিমুদ্দিন (রহ:) আব্দুর রহমান (রহ:),সহিদুল্লাহ্ খান (রহ:) মাজারে জিয়ারত করি। এর পরে পীর সাহেবের বাড়ি ঘুরে দেখি। দু’দিন থাকি, খাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচকের থেকে ধর্মীয় বানি শুনি আমাদের ভালো লাগে।

বর্তমান পীর পীরজাদা মো. সায়হাম উল্লাহ মেহেদী বলেন বলেন, বড়বাবা মরহুম মোল্লা কাজিমুদ্দিন (রহ) এবং বাবা শহিদুল্লাহ্ খান ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুর শহরে মারিফাত জগতের এক উচ্চমার্গীয় রামপুরী পীর সাহেবের অনুসারী ছিলেন। আমরাও রামপুর পীরের তরিকায় চলি।
দিনব্যাপী এই ওরসে ধর্মীয় আলোচনা, মিলাদ কিয়াম,তরিকতের বয়ান,তবারক বিতরণ ও আখেরী আয়োজন থাকে আমাদের। হাজারো মানুষ সুশৃঙ্খল ভাবে বসে বয়ান শুনেন, যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসে সেজন্য আমরা বিনামূল্যে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করি। যে যার মতো লঙ্গরখানা, উঠোনে, মাঠে, মাজার ও মসজিদের বারান্দায় ঘুমায়। কোনো সমস্যা হয় না। মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে তৈরিকৃত ঘরে তারা পর্দার আড়ালে বয়ান শুনে, এত মানুষের সমাগম হওয়ার পরেও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই আমাদের দরবারে। এটা শুধু আল্লাহর রহমত থাকলেই সম্ভব।

বুধবার আখেরী মুনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যান ও সুফিবাদের বিজয় কামনা করে ২০২৫ সালের বার্ষিক ওরশ মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.