কোন পথে এবারের বিশ্ব ইজতেমা

আইন-অপরাধ আরো ইসলামিক জাতীয় ঢাকা পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির
রাজধানীর কোলঘেঁষে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্ব এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ৩ ডিসেম্বর শূরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থি) আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন। তবে জুবায়েরপন্থিরা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ায় বিরোধ এখন তুঙ্গে।

এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন উপদেষ্টারা।
জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানায়, দুই পক্ষ সমঝোতায় না এলে প্রয়োজনে ইজতেমার অনুমতি বাতিল করা হতে পারে।

তাবলিগ জামাতের উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা বলছেন, ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের জোড় ইজতেমা করার সরকারি অনুমোদন নেই। তারা জোরপূর্বক তা করতে চায়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে মামলায়ও জড়িয়েছে দুই পক্ষ। জোড় ইজতেমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সাদপন্থিদের শীর্ষ মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত রোববার টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন মোহাম্মদ হোসেন নামে জুবায়েরপন্থি এক সাথী।

জননিরাপত্তা বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই পক্ষকে সমঝোতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে।

জননিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যদি তারা সমঝোতায় না আসেন, তাহলে প্রয়োজনে ইজতেমার অনুমতি বাতিল করা হতে পারে। কোনো অবস্থায়ই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দিতে পারে না। কারণ তৃতীয় পক্ষ এর সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে।

গত রোববার রাত থেকেই পুরো ইজতেমা মাঠ দখলে নিয়েছেন তাবলিগ জামাতের ‘শূরায়ে নেজাম’ বা মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা। তারা পুরো মাঠে পাহারা বসিয়েছেন। কেউ মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা।

এই মাঠেই পাঁচ দিনের ‘জোড়’ পালনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। গতকাল সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ২০ তারিখে ইজতেমা মাঠেই জোড় পালন করব। আশা করছি, সরকার শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে মাঠ হস্তান্তর করবে।’

সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমা ঠেকাতে গত রোববার বিকেলে ইজতেমা মাঠে অবস্থানের ঘোষণা দেন মাওলানা মামুনুল হক। এর পর রাত থেকেই ইজতেমা মাঠে দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন জুবায়ের অনুসারীরা।

শান্তির আহ্বান জানিয়ে আবারও জুবায়েরপন্থিদের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন সাদ অনুসারীরা। গতকাল সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের লেখা চিঠিতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে মাওলানা জুবায়েরের উদ্দেশে বলা হয়– আগামী ২০ ডিসেম্বর জোড় শুরু হতে যাচ্ছে। সেখানে কোনো পক্ষের একজন সাথিও যদি আপনার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে আপনাকে ও আপনার পরামর্শদাতাদের বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে জুবায়ের অনুসারী মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, সাদপন্থীদের আকিদাই ঠিক নেই, তারা আমাদের কি চিঠি দিবে? আমরা তাদের চিঠি দিতে পারি তারা যাতে আকিদাই পথে ফিরে আসে। অপরদিকে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর আমাদের পুরোনো সাথিদের জোড় টঙ্গীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এতে কয়েক লাখ সাথি উপস্থিত হবেন।

ইজতেমার মাঠে সহিংস ঘটনার জেরে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টা। সচিবালয়ে বৈঠকের পর হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের জানান, এবার সাদপন্থীরা আর ইজতেমা করার সুযোগ পাবে না। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান যে, সাদপন্থীদের ইজতেমার জন্য যে তারিখ ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল সেটি বহাল আছে কি-না এবং তাদের ইজতেমার বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তাদের (বিবাদমান বিভিন্ন পক্ষ) মধ্যে একটি আলোচনা চলছে এবং সরকার চায় তারাই সিদ্ধান্ত নিক।

তাবলিগে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। এর জের ধরে বুধবার ভোরে আবারও রক্তাক্ত হয় টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ। সাদপন্থীরা ভোররাতে ইজতেমা মাঠ দখল করতে গেলে সেখানে বাধার মুখে পড়ে শুরাপন্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত এবং শতাধিক আহত হন।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.