করোনায় প্রভাবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিরমুখে পড়েছে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (সিএমএসএমই) খাত। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর, বিসিক মেলায় অংশগ্রহণকারি মাইক্রো ও কুটির শিল্পখাত, চামড়া শিল্পনগারী, সিইটিপি, প্লাস্টিক শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্প এবং লবণ শিল্পখাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আগস্ট মাসের বিসিকের এক প্রতিবেদন এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প ইউনিটগুলোর ব্যাংকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ, পণ্য উৎপদন ও বিক্রি, শিল্প ইউটিন পরিচালনা, জনবলের বেতন ভাতা, ব্যাংক সুদ, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য ক্ষতিগুলো বিবেচনায় নিয়ে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে।
বিসিকের ৭৬টি শিল্পনগরীতে ৪ হাজার ৭৭৩টি শিল্প ইউনিট উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে এখানে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। করোনায় প্রভাবে এসব ইউনিটে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। সাভাবের চামড়া শিল্পনগরীতে অবস্থিত ১৫৪টি ট্যানারিতে বর্তমানে ২৫ হাজার লোক কর্মরত রয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কারনানাগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে প্লাস্টিক খাতে ৫ হাজার ১০০টি শিল্প কারখানার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বলা হয়েছে এখাতে করোনাকালিন সময়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পখাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
করোনাকালে দেশের লবণ শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি মূলত দুটি পর্যায়ে হয়েছে। লবণ চাষী এবং লবণ মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে বিসিক জানান। চাহিদার কথা মাথায় রেখে করোনার শুরু থেকে লবণ মাঠে উৎপাদ অব্যাহত রয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ তাদের ব্যয়ের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে বলে প্রতিবদনে উল্লেখ করা হয়। ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ মিলে লবণ চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাহ হাসান জানান, আমাদের এই প্রতিবেদন কয়েক মাস আগে তৈরি করা হয়েছিল। এখন এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। কয়েক দিন আগে বিসিকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে ৫ দিনব্যাপী একটি মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে ৫৬টি স্টল ছিল। তাদের বিক্রিও ভালো হয়েছিল। তারা মোট ৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে। অনেকদিন পর মেলা হওয়ায় বিক্রি বাড়ে।
তিনি জানান, জেলা পর্যায়ে এসএমই মেলা করার বিষয়ে ডিসিদের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়। ডিসিরা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না। অনেকদিন থেকে এসব মেলা বন্ধ থাকায় বিক্রি বাড়ত বলে তিনি জানান।
মোশতাহ হাসান জানান, যুব ঋণের ৩ হাজার কোটি টাকা আমাদের কাছে আসছে। এ বিষয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। তাদের লোকবল কম থাকায় তারা আমাদের মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করবে। আমরা বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তাদের মধ্যে যে যাদেরকে ঋণ দেয়ার মত তাদেরকে এই ঋণের নির্বাচন করে দিব। পরে কর্মসংস্থান ব্যাংক তাদেরকে ঋণ দিবে। এ বিষয়ে আমাদের সব জেলা ও জোন প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি চলমান করোনাকালেও যেন স্বাভাবিক হওয়া যায়। তবে এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি জানান, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা সরকারের কাছে ৬০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম। সরকার সেই টাকা দিতে রাজি হয়েছে। তবে সরাসরি আমাদের না দিয়ে তারা ব্যাংকের মাধ্যমে দিবে। এখন এ অর্থ ছাড় হয়নি। তবে আমরা বলেছি এই অর্থ কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।