রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভায় ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ডে জালিয়াতি করে বয়স কমিয়ে পাম্প চালক পদে শ্যামল শীল ও নৈশ প্রহরী পদে মো. তাজুল ইসলাম নামের দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাজুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৪৯ বছর চার মাস ৮ দিন । চাকরিতে যোগদানের সময় (২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর) তার বয়স ছিল ৪৮ বছর ৯ মাস ১৫ দিন। কিন্তু দেখিয়েছেন ৩০ বছর ১১ মাস ২৫ দিন । শ্যামল শীলের বর্তমান বয়স ৩৭ বছর ২ মাস ৫ দিন। চাকরি নেওয়ার সময় প্রকৃত বয়স ছিল ৩৬ বছর ৬ মাস ২৪ দিন। কিন্তু ৩০ বছর ২ মাস ২৫ দিন দেখিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে ১৮-৩০ বয়স সীমা নির্ধারিত থাকলেও জালিয়াতির পরেও তাদের বয়স সঠিক ছিলনা। এছাড়া নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়নি। ওই পদে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আবেদনকারী ছিলেন। তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামের মৃত আছমত আলী বেপারীর ছেলে এবং শ্যামল শীল একই ইউনিয়নের মাছরং গ্রামের কালাচাঁদ শীলের ছেলে। এদের মধ্যে মো. তাজুল ইসলামের নাম, ঠিকানা ও বাবা-মায়ের নাম একই থাকলেও ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ড অনুযায়ী তার তিনবার জন্ম হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটার তালিকা অনুযায়ী মো. তাজুল ইসলামের প্রথম জন্ম তারিখ ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি (ভোটার তালিকার সিরিয়াল নং-০৬০৯৩২৭৮৩২৩৮ ও ভোটারের ক্রমিক নম্বর ১৩১)। দ্বিতীয় ভোটার তালিকায় তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বর ( ভোটার তালিকার সিরিয়াল নং-০৬০৯৩২০০০৪৩৭ ও ভোটার ক্রমিক নম্বর ৬১৭)। পরে আবারও সংশোধন করে তাজুল ইসলাম তার জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ১ ডিসেম্বর (এনআইডি নং-৬৪৬৪৯৬০৯৪৪। একজন মানুষের তিনটি জন্ম তারিখ নিয়ে জনমনে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়া শ্যামল শীলের নামেও দুটি এনআইডি কার্ড পাওয়া গেছে। অর্থ্যাৎ তিনিও দুই বার ধরণীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার প্রথমটির জন্ম তারিখ. ১৯৮৭ সালের ২ মে । এনআইডি নম্বর ১৯২০৫৭৫৪৪৪। তার দ্বিতীয় এনআইডিতে তিনি জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ২৯ ডিসেম্বর । তার এনআইডি নম্বর ১৯৮৭০৬১১০১০৭৮৫৩৬৪ ও স্মার্ট কার্ড নম্বর ১৯২০৫৭৫৪৪৪। দুটি এনআইডি কার্ডে তার,বাবা ও মায়ের নাম অভিন্ন থাকলেও ঠিকানা ভিন্ন। প্রথমটিতে ঠিকানা বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের মাছরং গ্রাম ও দ্বিতীয়টিতে বানারীপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার বাড়ি রোড দেখিয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর বানারীপাড়া পৌরসভায় মো. তাজুল ইসলাম নৈশ প্রহরী পদে ও শ্যামল শীল পানি সরবরাহ শাখার পাম্প চালক পদে চাকরিতে যোগদান করেন । তাজুল ইসলামের ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী প্রথম জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স (২০২৪ সালের ৭ জুলাই) ৪৯ বছর চার মাস ৮ দিন। চাকরিতে যোগদানের সময় (২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর) তার বয়স ছিল ৪৮ বছর ৯ মাস ১৫ দিন। কিন্তু তিনি বয়স জালিয়াতি করে ১৯৯২ সালে ১ ডিসেম্বর অনুযায়ী ৩০ বছর ১১ মাস ২৫ দিন দেখিয়ে ওই পদে চাকরি নেন। শ্যামল শীলের প্রথম জন্ম তারিখ ১৯৮৭ সালের ২ মে। সেই অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স (২০২৪ সালের ৭ জুলাই) ৩৭ বছর ২ মাস ৫ দিন। চাকরি নেওয়ার সময় (২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর) জালিয়াতি করে তিনি জন্ম তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯২ সাল অনুযায়ী বয়স ৩০ বছর ২ মাস ২৫ দিন দেখিয়েছেন। মূলত তখন তার প্রকৃত বয়স ছিল ৩৬ বছর ৬ মাস ২৪ দিন। সরকারি চাকরিতে ১৮-৩০ বয়স সীমা নির্ধারিত থাকলেও জালিয়াতির পরেও তাদের বয়স সঠিক ছিলনা। সম্প্রতি বয়স জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়ার বিষয়ে তথ্য প্রমান প্রকাশ্যে আসায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ দুটি পদে প্রকৃত যোগ্য আবেদনকারীরা বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে অভিযোগ উঠেছে পৌরসভায় তাদের নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের এ জালিয়াতির সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। অপরদিকে একই নিয়োগে পাইপ লাইন মেকানিক পদে পৌরসভার মেয়র তার আপন ভাইয়ের ছেলে অমর শীলকে চাকরি দেওয়া নিয়েও কথা উঠেছে। প্রসঙ্গত,মো.তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীলের ব্যক্তিগত সিএনজি চালক। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মেয়রের সঙ্গে ব্যক্তিগত এ সুসম্পর্কের সুযোগে তাজুল ইসলাম সিএনজি চালানোর পাশাপাশি নৈশ প্রহরী পদে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। মুঠোফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে পৌরসভার নৈশ প্রহরী মো.তাজুল ইসলাম ও পাম্প চালক শ্যামল শীলের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যপারে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব শাহিন আকতার মন্তব্য করতে অসম্মতি জানান। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র ও নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন,অভিযোগ পেলে বিষয়টির আইনানুগ বিশ্লেষন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।