রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি॥
বরিশালের বানারীপাড়ায় আব্দুস সালাম গোলন্দাজ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর তিন বছর পরে তাকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী ও জামাতাসহ চারজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আব্দুস সালাম গোলন্দাজের বোন নাসিমা ইয়াসমিন বাদী হযে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্প্রতি মামলা দাযের করলে বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ১২ জুন বুধবার মামলাটি বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজ্জু করা হয়। মামলার আসামীরা হলেন সাবিনা ইয়াসমিন (৫০),তার মেয়ে জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ (৩৮), মো. মাসুম (৩৮) ও ভাই দুলাল হাওলাদার (৫৩) । মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদীর বড় ভাই সালাম গোলন্দাজের সঙ্গে ১নং আসামি সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ের পর তার গর্ভে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানার সঙ্গে ২নং আসামি খালিদ মাহমুদ সোহাগের বিবাহ হয় এবং এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিথিলা ফারজানা তার মা ও স্বামীর অনৈতিক কর্মকান্ড হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং স্বামী সোহাগকে তালাক দেয়। ব্যাপারটি সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী আ. সালাম গোলন্দাজ জেনে ফেলায় স্ত্রীকে এ অনৈতিক পথ থেকে ফেরানোর জন্য শাসন করাসহ বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ দেন। স্বামীর অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জামাতার সঙ্গে নির্বিঘেœ পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে সাবিনা ইয়াসমিন তাকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আসামি সাবিনা ইয়াসমিন অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতিমূলক দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বানারীপাড়ার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারকে কমিশনে বাসায় নিয়ে অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে দাতা দেখিয়ে এবং তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গ্রহীতা হয়ে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর ৬ একর জমির হেবা দলিল সৃষ্টি করেন যার নম্বর-১৮১৭। পরবর্তীতে অর্থ সম্পত্তি আত্মসাৎ ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ পরকীয়া প্রেমের বাধা দূর করার জন্য অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারী রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা হতে পরদিন ৯ জানুয়ারী সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন চেতনানাশক ঔষধ (বিষ) সেবন করিয়ে এবং এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আসামীরা সকালবেলা প্রচার করেন যে সালাম গোলন্দাজ হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আসামিরা তখন তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করেন। পরবর্তীতে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত সাবিনা ইয়াসমিন বানারীপাড়ার প্রয়াত ছত্তার মৃধার ছেলে আনিছ মৃধার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার করার পাশাপাশি তার মেয়েজামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগের সঙ্গেও অবৈধ সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। বর্তমানে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামীর রেখে যাওয়া অর্থবিত্ত ও ইটভাটাসহ সমস্ত ধনসম্পদের মালিক হয়ে একটি অপরাধী চক্র সৃষ্টি করে নিজেও অনেক মামলা-মোকদ্দমায় জড়িত হয়ে অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে মৃত সালাম গোলন্দাজ ও তার পরিবারের সম্মানহানি করছেন বলেও বাদী মামলায় উল্লেখ করেন। নিকটাত্মীয়দের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ মে শুক্রবার সকাল ১০টার সময় বাদীর বসত ঘরে তার ভাবী সাবিনা ইয়াসমিনকে ডেকে এ ব্যাপারে নিষেধ করলে সে হুমকি দেয় তার ভাইকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকেও সেভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় করা হবে। সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে হত্যা মামলার অপর আসামী তার ভাই দুলাল হাওলাদার ও জামাতা সোহাগের সঙ্গে লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে দুলাল ও সোহাগ তাকে প্রায়ই হুমকি দিতেন তোমার স্বামীকে তাদের সহযোগিতায় কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা প্রকাশ করে দেবো। তখন সাবিনা ইয়াসমিন অপর আসামীদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখেন। বিষয়টি লোকমুখে পরিবারসহ সবার কাছে জানাজানি হয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় সালাম গোলন্দাজকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এ মামলা দায়ের করা হয় উল্লেখ করে বাদী দাবি করেন তার ভাইয়ের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের মাধ্যমে রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করলে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে। এদিকে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় সাবিনা ইয়াসমিনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে ব্যবসায়ী সালাম গোলন্দাজ হত্যা মামলাটি থানায় রুজ্জু করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।