১১ বছর ধরে অচল একমাত্র এক্সরে মেশিন, ৫২ পদের ৩৪ টিই শূন্য
জাবেদ তালুকদার নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে : নানা সমস্যায় জর্জরিত নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স। ১১ বছর ধরে অচল হাসপাতালের একমাত্র এক্সরে মেশিন, রয়েছে জনবল সংকটও। যার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন কিন্তু হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে ভাল মানের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। নবীগঞ্জ থেকে জেলা সদরের দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার হওয়ায় উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সই। গুরুতর অসুস্থ হলে রোগীকে নিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেট কিংবা জেলা সদরে নিয়ে যেতে হয়। করোনা রোগীদেরকে কোনমতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪ টি কেবিন ও ১৫ টি শয্যা প্রস্তত রয়েছে এবং ২২ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জে এ পর্যন্ত ২৫৬ জন ব্যাক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২২৮ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৬ জন এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ও বাকিরা হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে ২০১৮ সালে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়া হয়নি। সেই সিমীত জনবল দিয়েই উপজেলাবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। জনবল বৃদ্ধি পেলে আরো ভাল মানের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব বলেও জানান তারা। সেই ৩১ শয্যার জনবলের মধ্যেই মেডিকেল অফিসার ১টি পদ শূন্য, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (গাইনি চিকিৎসক) ১টি, সার্জারি চিকিৎসক ১টি, অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদটি প্রায় ১২ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। টেকনোলজিস্টের অভাবে প্রায় ১১ বছর ধরে অচল হয়ে আছে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিন। এতে রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রায় ৭ বছর ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) ১টি পদ শূন্য। এতে সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ছুটতে হয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অন্যদিকে নার্সের ৭টি, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৭টি পদ, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৪টি, অফিস সহকারীর ১টি, ক্লিনারের ১টি, এমএলএসএস ৩টি, আয়া ২টি, ওয়ার্ড বয় ২টি, বাবুর্চি ২টি ও মালি ১ টি সহ ৫২ টি পদের মধ্যে ৩৪ টি পদই শূন্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘৩১ শয্যার কম জনবল দিয়েই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। ৩১ শয্যার জনবলেও বেশ কিছু পদ শূন্য আছে। এই সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সাধ্যমতো জনগনকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১১ বছর ধরে নষ্ট আছে। তবে একটি নতুন এক্স-রে মেশিন এসেছে। শীঘ্রই আমরা এটি চালু করতে পারব। এছাড়া জনবল নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে। জনবল বাড়লে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও বলেন, ’করোনার মৃদু হতে মাঝারি উপসর্গের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা আমাদের এখানে আছে। তবে গুরুতর উপসর্গের করোনা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার করা ব্যতীত ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।’