বামনা(বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের লাইসেন্স বিহীন সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে হাতুরে ডাক্তার দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশন প্রসূতি মাতা মোসাঃ মেঘলা আক্তার ও নবজাতকের লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে মঙ্গলবার দুপুর ২: ০০ টায় বামনা উপজেলা পরিষদের সম্মূখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন চলাকালীণ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিহত প্রসূতি মোসাঃ মেঘলা আক্তারের মাতা মোসাঃ পারভীন আক্তার, পিতা মোঃ ছগির হাওলাদার, স্বামী মোঃ রফিকুল ইসলাম তারেক, মোসাঃ সিমা বেগম, লুনা বেগম প্রমূখ।
অপরদিকে বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে মঙ্গলবার বেলা ১১: ০০ টায় উপজেলার ডৌয়াতলা বাজার গোলচত্ত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা, বুকবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান সবুজ, বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান ছগির, রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, বামনা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সাব্বীর ফেরদৌস তালুকদার প্রমূখ।
মামলাসূত্রে জানাগেছে, সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৫ জানুয়ারী বিকালে বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম তারেক এর স্ত্রী প্রসূতি মোসা. মেঘলা আক্তারকে সিজার করানোর জন্য ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬: ০০ টার দিকে প্রসুতির প্রসব বেদনা বেড়ে যাওয়া। তখন হসপিটালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সবুজ কুমার দাস হসপিটাল মালিক পক্ষের পরামর্শে এবং পরিচালক রেজাউল ইসলামের উপস্থিতিতে অপারেশন শুরু করেন। অপারেশনের সময় রাত ১১টার দিকে রোগিটি মারা যায়। তারপর জীবিত নবজাতক শিশুকে পুনরায় প্রসূতির পেটের মধ্যে রেখে পেট বাহির থেকে সেলাই করে কসটেপ মেরে অপারেশন থিয়েটার কক্ষ থেকে রোগী বের করে দিয়ে রোগী জরুরী বরিশাল নিয়ে যেতে বলেন। হসপিটাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক এ্যাম্বুলেন্স যোগে প্রসুতি মোসাঃ মেঘলা আক্তারকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সন্দেহের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া ইসলামিয়া ক্লিনিকে নিয়ে গেলে উক্ত ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে বলে রোগীর অবস্থা ভাল না দ্রুত সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। অতঃপর প্রসূতি মোসাঃ মেঘনা আক্তারকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা এলাকায় পৌঁছালে এতো দীর্ঘ সময় ধরে মেঘলা আক্তারের কোন সারা শব্দ না পেলে তাদের পুনরায় সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাকে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তখন ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেঘলা আক্তারকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় যে, মেঘলা আক্তার আনুমানিক দেড় থেকে দুই ঘন্টা পূর্বে মারা গেছে।
পরে তারা নিহতের বাবা বাড়ীতে লাশটি নিয়ে আসে। এই ঘটনার পর থেকে সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা, ডাক্তার, নার্সসহ সকল স্টাফরা পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল ৯: ০০ টায় বামনা থানা অফিসার ইনচার্জ তুষার কুমার মন্ডল এর নেতৃত্বে প্রসূতি মোসাঃ মেঘলা আক্তারের বাবার বাড়ী উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের গুদিঘাটা গ্রাম থেকে প্রসূতি মোসাঃ মেঘলা আক্তার ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে বরগুনা মর্গে পাঠায়।
এঘটনায় সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে পলাতক অবস্থায় শনিবার(২০জানুয়ারি) ভোর রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর সদস্যরা। শনিবার বিকালে গ্রেপ্তারকৃতকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর ক্যাম্প থেকে বামনা থানা পুলিশ গ্রহণ করেন। রবিবার সকালে চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে বরগুনা আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।