বামনা(বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের লাইসেন্স বিহীন সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ওই হসপিটালের চেয়ারম্যান ও উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে পালাতক অবস্থায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর সদস্যরা।
শনিবার(২০ জানুয়ারি) ভোর রাতে তাকে (মোঃ মিজানুর রহমান) যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে আটক করা হয়। শনিবার বিকালে গ্রেপ্তারকৃতকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) এর ক্যাম্প থেকে বামনা থানা পুলিশ গ্রহণ করেন। রবিবার সকালে চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে বরগুনা আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
জানাগেছে, ১৫ জানুয়ারী সোমবার রাত ১০টায় সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মোসা. মেঘলা আক্তার(২০) নামে এক প্রসুতি ও তার গর্ভেও সন্তানের মৃত্যু ঘটে। নিহত ওই প্রসুতি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম তারেক এর স্ত্রী।
মামলাসূত্রে জানাগেছে, সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১৫ জানুয়ারি বিকালে প্রসূতি মোসা. মেঘলা আক্তারকে সিজার করানোর জন্য ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে প্রসুতির প্রসব বেদনা বেড়ে যায়।
তখন হসপিটালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (এ্যানেস্থাশিয়া সার্জন) ডা. সবুজ কুমার দাস হসপিটাল মালিক পক্ষের পরামর্শে এবং পরিচালক রেজাউল ইসলামের উপস্থিতিতে অপারেশন শুরু করেন। অপারেশনের সময় রাত ১১টার দিকে রোগীটি মারা যায়। তারপর জীবিত নবজাতক শিশুকে পুনরায় প্রসূতির পেটের মধ্যে রেখে পেট বাহির থেকে সেলাই করে কসটেপ মেরে অপারেশন থিয়েটার কক্ষ থেকে রোগী বের করে দিয়ে রোগী জরুরী বরিশাল নিয়ে যেতে বলেন। হসপিটাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক এ্যাম্বুলেন্স যোগে প্রসুতি মোসাঃ মেঘলা আক্তারকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সন্দেহের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া ইসলামিয়া ক্লিনিকে নিয়ে গেলে উক্ত ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে বলে রোগীর অবস্থা ভাল না দ্রুত সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। অতঃপর প্রসূতি মোসাঃ মেঘনা আক্তাকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা এলাকায় পৌঁছালে এতো দীর্ঘ সময় ধরে মেঘলা আক্তারের কোন সারা শব্দ না পেলে তাদের পুনরায় সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাকে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তখন ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তব্যরত চিকিৎসক মেঘলা আক্তারকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় যে, মেঘলা আক্তার আনুমানিক দেড় থেকে দুই ঘন্টা পূর্বে মারা গেছে। পরে তারা নিহতের বাবা বাড়ীতে লাশটি নিয়ে আসে। এই ঘটনার পর থেকে সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা, ডাক্তার, নার্সসহ সকল স্টাফরা পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বামনা থানা অফিসার ইনচার্জ তুষার কুমার মন্ডল এর নেতৃত্বে প্রসূতি মোসাঃ মেঘলা আক্তারের বাবার বাড়ী উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের গুদিঘাটা গ্রাম থেকে প্রসূতি মোসাঃ মেঘলা আক্তার ও নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে বরগুনা মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান মামলার ৩ নম্বর আসামী মোঃ মিজানুর রহমানকে ঢাকা থেকে র্যাব-২ এর সদস্যরা আটক করে।
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ তুষার কুমার মন্ডল জানান যে, সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার মামলা ৩ নম্বর আসামী ওই হসপিটালের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমানকে ঢাকাস্থ মোহাম্মাদপুর র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র্যাব-২) অফিস থেকে শনিবার গ্রহণ করে রবিবার বরগুনা আদালতে পাঠিয়েছি। অন্য আসামীদের গ্রেফতার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।