ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিজাব না খোলায় ভাইবা নেননি শিক্ষকরা

আবহাওয়া আরো ইসলামিক শিক্ষা শিক্ষা সাহিত্য সারাদেশ
শেয়ার করুন...

নাইমুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি-
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভাগীয় সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষায় নেকাব না খোলায় এক ছাত্রীর ভাইভা নেননি শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার চূড়ান্ত ভাইভা পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভাইভায় নেকাব পরে অংশ নেয় এক ছাত্রী। এসময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতে নেকাব খুলতে বলেন। ওই ছাত্রী নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে নেকাব না খোলায় তার ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা।

ওই শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার ভাইভা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে তার ভাইভা গ্রহণ করা হবে বলে জানান শিক্ষকরা। তবে ওই শিক্ষার্থী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখনো পর্যন্ত তার ভাইভা নেওয়া হয়নি।

ঘটনার দিন ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে ভাইভায় নেকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি। তাকে বুজিয়েছি যে, ‘দেখো আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না।’ যখন সে রাজি হয়নি তখন আমরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা বোর্ড থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।’

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম, সে যে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। নারী শিক্ষিকা দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এভাবে করলে তাহলে আমরা মার্ক দিব না।’

বিভাগটির সভাপতি শিমুল রায় বলেন, ‘এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে নারী শিক্ষক দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন কিন্তু সবসময় তো থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা কি করবো? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেয়া উচিত। বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মূখ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিৎ।

ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে নেকাব করলে শিক্ষিকাদের দ্বারা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেয়া ভালো কিন্তু তাদের জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি যেহেতু জানিনা, সেক্ষেত্রে তা জেনে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এই কাজটি উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এরকম শিক্ষার্থীরা থাকে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকের মাধমে তাদের আইডেনটিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে গেলে তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.