রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল) প্রতিনিধি ॥ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে আসা ৭১’র রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন সৎ রাজনীতিকের পথিকৃৎ। আপদামস্তক রাজনীতিবিদ। ধ্যান,মন ও জ্ঞান যাঁর দেশ ও জনকল্যাণ। বরিশাল-১ ও ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস স্কুল জীবন থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অবিনাশী আদর্শে লালিত হয়ে বড় হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষককুলের নয়নের মনি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সাহচর্যে রাজনীতি করে গড়ে ওঠা তালুকদার মো. ইউনুস তাঁরঁই মত ‘সৎ রাজনীতিকের পথিকৃৎ’ হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি ও সুনাম কুড়িয়েছেন। এদেশে এমপি,মন্ত্রী হলেই অনেকে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যান । রাতারাতি তাদের ধন-সম্পদ বহুগুন বেড়ে যায়। দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহার গড়ে তোলেন । সেখানে ব্যতিক্রম সৎ ও নির্মোহ রাজনীতিক তালুকদার মো. ইউনুস। দুটি আসনে পরপর দুই বার সংসদ সদস্য ও দীর্ঘ দিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের শীষ পদে আসীন থাকলেও সাদামাটা জীবন তাঁর। রাজনীতিকে তিনি দেশ ও জনগণের জল্যাণে নেশা হিসেবে নিয়েছেন, পেশা হিসেবে নয়। আইনী পেশায় চলে তার জীবন সংসার। আদর্শ ও সততার কারনে কালক্রমে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে “ প্রিয়জন” হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে তার অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার মো. ইউনুসের ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতে এক মাসের সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর বয়রা বর্ডার এলাকা থেকে দেশে প্রবেশ করে ৪ অক্টোবর যশোরের বাঘারপাড়া নারকেলবাড়ি এলাকা থেকে পাক সেনাদের হাতে তালুকদার মো. ইউনুসসহ ৯৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আটক হন। প্রথমে তাদের ক্যান্টনমেন্টে ও পরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। সেখানে কোর্ট মার্শালের বিচারে তাদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মুত্যু কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর তাদের ফাঁসি কার্যকরের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করলে কারাগারের দায়িত্বরতরা পালিয়ে যায়। ফলে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা জেলের ফটক ভেঙ্গে তাদের মুক্ত করেন। এর পরে ৪ দিন পায়ে হেঁেট তালুকদার মো. ইউনুস তিন সহযোদ্ধাসহ নিজ এলাকা বরিশালের গৌরনদীতে ফিরে আসেন। তিনি ৭৫’র ১৫ আগষ্টের পরে জিয়া ও এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছিলেন । ৭৫’র ১৫ আগষ্টের মর্মান্তুদ ঘটনার পরে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পরে দেশে ফিরে তালুকদার মো. ইউনুস গ্রেফতার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারান্তরীণ ছিলেন। এক এগারোর সময়ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে এই নেতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফলে বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলায় তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মুজিব অন্তপ্রাণ অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১(অগৈলঝাড়া-গৌরনদী ) আসনে ও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিটে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য,পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রণেতা আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ জোট সরকারের আমলে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে প্রবাসে থাকায় ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার বরিশাল-১ আসনে অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে প্রার্থী করা হয়। পরপর দুই বার পাশাপাশি দুটি আসনে তালুকদার মো. ইউনুস সংসদ সদস্য থাকাকালীন নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তিময় পরিবেশ বজায় রাখেন। সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের দক্ষ ও দুরদর্শি নেতৃত্বে কালক্রমে বরিশালও গোপালগঞ্জের মত আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত হয়েছে। এদিকে সর্বমহলে সৎ এমপি ও সাদা মনের মানুষের খ্যাতি পাওয়া জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব নেতা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় বানারীপাড়া ও উজিরপুরের নেতা-কর্মী ও সমর্থরা দারুন উচ্ছ্বসিত ও আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলেন। মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল বের করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তার পরিবর্তে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননকে এ আসনে নৌকার টিকিট দেওয়া হয়। একই ভাবে ২০১৮ সালেও প্রথমে তাকে বরিশাল-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল । পরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্র নায়ক সোহেল রানাকে মহাজোটের প্রার্থী করা হলে তালুকদার মো. ইউনুসকে সরে যেতে হয়। যদিও ওই নির্বাচনে শেষমুহুর্তে সোহেল রানার পরিবর্তে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলমকে নৌকার টিকিট দেওয়া হয়। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এ সিন্ধান্তকে হাসি মুখে মেনে নিয়ে তিনি শাহে আলমকে বিজয়ী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়ে বঞ্চিত হওয়ার পরেও রাশেদ খান মেননকে জয়ী করতে অসুস্থ শরীর নিয়ে রাত-দিন একাকার করে দুই উপজেলায় গণসংযোগ,পথসভা,উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়েছেন। আদর্শের রাজনীতিতে চড়াই-উৎরাই থাকবে। সবসময় আপনি পুরস্কৃত হবেন এমনটি নয়। কখনও আপনার পরীক্ষার সময়,কখনও আপনাকে কঠিন সময় পার করতে হবে,কখনও সুবিধাবাদীদের জন্য পিছু হঠতে হবে। কিন্তু,সব কিছুকে মাড়িয়ে যিনি ত্যাগ ও আদর্শের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন, তিনি সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। তেমনী একজন আদর্শবান মুজিব অন্তপ্রাণ নেতা তালুকদার মো. ইউনুস। আদর্শ তার ধমনীতে। তাইতো বার বার বঞ্চিত হয়েও তিনি ত্যাগ ও আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত। তালুকদার মো. ইউনুস প্রমাণ করেছেন,ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ও আদর্শই রাজনীতিতে শেষ কথা। কিছু পাওয়া না পাওয়ার হিসাবটা সাময়িক। নিজের ব্যাক্তি স্বার্থের চেয়ে দল,দেশ ও নেত্রীর স্বার্থ তার কাছে বড়। তিনি যেভাবে মনোনয়ন পেয়েও আবার হারিয়ে আদর্শচ্যূত হননি,সেই একই আদর্শের পথে যদি আওয়ামী লীগের সকল মনোনয়ন বঞ্চিতরা হাটতেন তাহলে এই রাজনৈতিক দলটি অন্যরকমভাবে বিকশিত হত। কিন্তু অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের মতো কয়জন নেতাই আছেন যারা ত্যাগের মহিমা ও আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত? এদিকে নেতা-কর্মীরা তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন,শুধু এমপি হিসেবে নয় স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে থাকাটাও গৌরবের। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জনগনের স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করে পঞ্চমবারের মত সরকার গঠন করেছেন,প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের¡ সোনারবাংলা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে এটাই প্রত্যাশা