বানারীপাড়ায় তহশিলদারদের নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন এসিল্যান্ড

আইন-অপরাধ আরো বরিশাল সারাদেশ
শেয়ার করুন...

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবুজর মোহাম্মদ ইজাজুল হক দুই তহশিলদারসহ স্টাফদের নেওয়া ঘুষের টাকা উদ্ধার করে ভূক্তভোগী সেবাপ্রার্থীকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জানা গেছে,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি প্রয়াত ওসমান গণির মেয়ে জেসমিন আক্তার ডালিয়া তার প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের সম্পত্তি নিজ ও ছেলের নামে নামজারির ( রেকর্ড) জন্য চার মাস পূর্বে বানারীপাড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান। সেখানে তাকে ই-নামজারির জন্য অফিসের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (তহশিলদার) বিমল চন্দ্র হালদার। এসময় নামজারি করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র হালদার ৪ হাজার, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা আসমা আক্তার ২ হাজার ,অফিস সহায়ক রুবি আক্তার দেড় হাজার ও অফিস স্টাফ না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্বে থাকা মেহেদী হাসান ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেন। টাকা নেওয়ার পরে গত প্রায় চার মাস ধরে ডালিয়াকে তারা ঘুরাতে থাকেন। এমনকি নামজারির জন্য তার আবেদনটি পর্যন্ত করা হয়নি। বৃহস্পতিবার ( ৯ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ডালিয়া বানারীপাড়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তার সম্পত্তির নামজারির বিষয়ে জানতে গিয়ে দেখেন চার মাসেও তার আবেদনটিই করা হয়নি। এসময় অবৈধ কম্পিউটার অপারেটার মেহেদি হাসান তাকে নামজারি করতে হলে আরও টাকা লাগবে বলে জানান। এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র হালদার তাকে ধৈর্য্য ধরতে না পারলে কিছু করার নেই বলে জানান। ভূক্তভোগী জেসমিন আক্তার ডালিয়া এসময় বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার ( ভূমি) আবুজর মোহাম্মদ ইজাজুল হকের সঙ্গে দেখা করে অফিস স্টাফ ওই চারজন সাড়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে চার মাসেও তার কাজটি করে না দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। এসময় তিনি ডালিয়াকে তার কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা উদ্বার করে তা থেকে নামজারির জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি বাবদ ১১শত টাকা রেখে বাকী টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাহির থেকে নামজারির জন্য আবেদন করতে বলেন।
এসিল্যান্ড এসময় অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালণ করা মেহেদি হাসানকে কার কক্ষে ডেকে এনে অভিযোগকারী ভূক্তভোগী ডালিয়ার মুখোমুখি করে কখনও যেন তাকে আর ভূমি অফিসে দেখা না যায় এবং তাৎক্ষনিক চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বানারীপাড়ায় দায়িত্ব পালণ করা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র হালদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ‘ওপেন সিক্রেট’। তার বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভূক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত খুঁিটর জোড়ে তিনি বানারীপাড়ায় তিন বছরের অধিক সময় ধরে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালণ করছেন। তিনি তার নিজ এলাকা উজিরপুর উপজেলা থেকে মেহেদি হাসানকে এনে গত এক বছর ধরে বানারীপাড়ায় তার অফিসে অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করান।
তবে সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র হালদারসহ অভিযুক্তরা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে অবস্থানের কথা জানিয়ে এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবুজর মোহাম্মদ ইজাজুল হক বলেন,ভূক্তভোগী জেসমিন আক্তার ডালিয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবৈধভাবে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালণ করা মেহেদিকে তাৎক্ষনিক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,ভূমি অফিসের যেকোন কাজে সেবা প্রত্যাশীরা সরাসরি তার সঙ্গে যেন দেখা করেন।
এদিকে বানারীপাড়ার নবাগত উপ-সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবুজর মোহাম্মদ ইজাজুল হকের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরোধী এ অবস্থানকে স্থানীয় সচেতনমহল সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বানারীপাড়ায় ‘ভূমি অফিস নামের এ ঘুষের হাটে’ একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান এসিল্যান্ডের দুর্নীতি বিরোধী এ লড়াই সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.