৮০ টাকার নিচে নেই ভালো কোনো সবজি, সর্বত্র ঊর্ধ্বগতি

অর্থনীতি আরো জাতীয়
শেয়ার করুন...

অনলাইন ডেস্কঃ
একমাস পার হলেও সরকারের বেঁধে দেয়া দামের প্রতিফলন নেই ডিম-আলু-পেঁয়াজের বাজারে। কম তো দূরের কথা গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে ডিম হালিতে বেড়েছে ৫ টাকা। দাম বাড়ার দৌঁড়ে রয়েছে সবজিও। ৮০ টাকার নিচে ভালো কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। কোনটার কেজি আবার ২০০ টাকা!

রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল, কাটাসুর, হাতিরপুল, রামপুরা, সেগুনবাগিচাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে, সেখানকার ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বাজারের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

কাঁচাবাজারের অবস্থা কী? জানতে চাইলে হাতিরপুলের সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন: তরকারির কেজি দুইশ’ টাকা হয়ে গেছে। সিম দুইশ’ আর সব তরকারি একশ’ টাকা। সবজির দাম বাড়ছে আর বাড়ছে। মানুষ খাইবো কী…আলু রেট দিয়েছে কেজি ৩৬ টাকা। এখন আলুর কেজি হয়ে পড়ে ৫০-৫২ টাকা। আলুর কেজি পাইকারি ২০ টাকা, কিভাবে ৪৮ টাকা হয়।

সবজির বাজার:
বাজার ঘুরে দেখা গেছে: শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু করলেও দাম কমেনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বাজারে এক কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। জাত ও বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, পোটল-ঢেঁড়স-কচুরমুখি-করলা-ঝিঙা-চিচিঙা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে মুলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া পিস আকারে লাউ ৭০ থেকে ১০০ টাকা আর ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এর পাশাপাশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় ।

বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা, তীর পেঁয়াজ ১০০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ টাকা আর আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খোলা বাজারে এক হালি ডিম ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় । রসুনের দামও ঊর্ধ্বমুখী। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে ।

মাছ-মাংসের বাজার:
মাছের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখা পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা, চাষের কই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাচকি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভার কার্প ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬৮০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি প্রতি কেজি ২৯০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

মসলার বাজারে মাস ব্যবধানে মূল্যবৃদ্ধির চিত্র:
ঢাকার বাজারে আমদানি (ভারত-ইন্দোনেশিয়া) করা আদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মসলার আরেক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ জিরা বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা প্রতিকেজি।

দাম বাড়ার দৌঁড়ে রয়েছে লবঙ্গ-এলাচ-দারুচিনিও। প্রতিকেজি লবঙ্গ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এলাচ ১৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস লবঙ্গ ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, এলাচা ১৬০০ থেকে ২৬০০, দারুচিনি ৪১০ থেকে ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো। এছাড়া মসলা পণ্যের মধ্যে দাম বেড়েছে ধনিয়ার। প্রতিকেজি ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা।

খোলা বাজারে বিআর আটাশের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে আর মিনিকেট জাতের চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। পাশাপাশি খোলা বাজারে খোলা আটা কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর খোলা ময়দা ৬০ টাকায়।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিন মন্ত্রীর বক্তব্য:
সবজির দাম কমার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন: কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছেন। তারা সঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করছেন না। এটা একটা বড় অন্তরায়। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করলে তারা সাপ্লাইই দেয় না। সামনে শীতকাল আসছে। ফলে প্রচুর সবজি আসবে। এতে করে সব ধরনের সবজির দামই কমে আসবে।

এমন অসহায়ত্ব আছে সরকারের আরেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের কণ্ঠেও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: বাজার নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি দুনিয়ায় কারোরই নেই। বাজারের সিন্ডিকেট যদি দেখতে পারতাম, ধরতে পারতাম, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। সিন্ডিকেট ধরা যায় না, অধরা থেকে যায়।

আলু-পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করেও কার্যকর না করতে পারা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গিয়ে তারা শতকরা ৩০ ভাগ ডিউটি বাড়িয়ে দেয়ার কারণে আমদানি মূল্য বেশি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কমানো যাচ্ছে না। ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ ঢাকায় আসতেই প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আমাদের দেশে যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ চাষ হয় সেখানকার হাট-বাজারেও দাম বেড়ে যাওয়ায় কারণে পেঁয়াজের মূল্য কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। দেশে মোট চাহিদার ২০ ভাগ পেঁয়াজ ঘাটতি আছে সেজন্য বাজারে দাম বেড়েছে।আলুর চাহিদা আর সাপ্লাইয়ের হিসাবে গরমিল আছে। আলু মানুষ বেশি খাচ্ছে, মাছসহ সবজিতে এটাও একটা কারণ। তবে আগামী মাস থেকে নতুন আলু বাজারে আসলে দাম কমে আসবে।

সূত্রঃ চ্যানেল আই


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.