রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)
বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরে সন্ধ্যা নদীর তীরে এক প্রান্তে রাস্তা ও দু’পাশে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ না করায় এলজিইডির আড়াই কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি কোনই কাজে আসছেনা। সংযোগসহ রাস্তা নির্মাণ করা না হলে ব্রিজটি নির্মাণে সরকারের আড়াই কোটি টাকা অর্থ অপচয়ে কারন হয়ে দাঁড়াবে। উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে,বানারীপাড়া পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ধ্যা নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে বন্দর বাজারের ফেরী ঘাট থেকে দক্ষিণ নাজিরপুর হাই স্কুল পর্যন্ত শহর রক্ষা বাধের আদলে ব্রিজসহ রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফেরী ঘাট থেকে কিছু অংশে প্রথমে এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে কার্পেটিং রাস্তা ও পরে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। দরপত্রে ব্রিজের সঙ্গে উত্তর প্রান্তে ৯০ মিটার ও দক্ষিণ প্রান্তে ১০০ মিটার সংযোগ রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও শুধু ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে সংযোগ সড়কের ১০০ মিটারসহ মাত্র সাড়ে তিনশ মিটার রাস্তা নির্মাণ করা হলে ঐতিহ্যবাহী বানারীপাড়া বন্দর বাজারের ব্যবসা- বানিজ্যের প্রসারতালাভসহ এলাকাবাসী এর সুফল পেত। অন্যথায় ব্রিজ নির্মাণ অর্থ অপচয়ের নামান্তর হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে ব্রিজ নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মেহেদী হাসান বাদল জানান,সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদন না হওয়ায় তিনি ব্রিজের সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ব্রিজের সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হলেও দক্ষিণ প্রান্তে রাস্তা নির্মাণ করা না হলে ব্রিজটি কোন কাজে আসবে না। তাই ব্রিজের দু’পাশে সংযোগ রাস্তাসহ দক্ষিণ নাজিরপুর হাই স্কুল পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া বন্দর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের স্বপ্নের এ রাস্তাাটি নির্মিত হলে নদীর পথের পাশাপাশি সড়ক পথেও পণ্য লোডআনলোড সহজতর হবে। ক্রেতা-বিক্রেতার সরগমে বাজার আবার নবরূপে জমে উঠবে। রাস্তাটি ঘিরে তারা ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন স্বপ্নের জাল বুনছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর সাইদুর রহমান শাহজাহান বলেন, ব্রিজের সংযোগসহ দক্ষিণ নাজিরপুর প্রাইমারী ও হাই স্কুল হয়ে মাছরং গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা নির্মিত হলে এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে যাবে। নদীর তীরে জেগে ওঠা চরে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে যাওয়া আসা সহজতর হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে এর ইতিবাচক,প্রভাব পড়বে ব্যবসা -বানিজ্যে।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া বন্দর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত লাল কুন্ডু বলেন. এ রাস্তাটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে বন্দর বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে এর সুফল ভোগ করার পাশাপাশি ব্যবসা বনিজ্যের প্রসারতা ঘটবে। পৌর বাসীসহ গোটা উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। তিনি রাস্তা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
এ ব্যপারে বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন. বানারীপাড়া পৌর শহর রক্ষা ও বন্দর বাজারের ব্যবসা-বানিজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে নদীর তীরবর্তী ব্রিজসহ রাস্তাাটি খুবই গুরুত্ববহণ করে। বাজার কেন্দ্রীক একমুখী রাস্তাকে বহুমুখীতে রূপান্তর ও বাস-ট্রাকসহ সবধরণের পণ্যবাহী যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করে পণ্য লোড আনলোড করার জন্য এ রাস্তাটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরীন তন্বী বলেন,ব্রিজের এপ্রোচসহ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি নির্মানে যথাযথ প৪দক্ষেপ নেওয়া হবে।
বানারীপাাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন,বানারীপাড়া পৌর শহর রক্ষা,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা বানিজ্যের প্রসারতা লাভের জন্য নদীর তীরে শহর রক্ষা বাধেঁর আদলে তিনটি ব্রিজ সহ রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তার একাংশসহ বৃহৎ দুটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী আরেকটি বৃহৎআকারের ব্রিজসহ রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ শাহে আলম বলেন, বানারীপাড়ার ধান-চালসহ ব্যবসা-বানিজ্যের অতীত হৃদ গৌরব ফিরিয়ে আনতে ও বসবাস উপযোগী টেকসই আধুনিক শহর বিনির্মাণের লক্ষে পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড় আবাসন থেকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ফেরীঘাট থেকে দক্ষিণ নাজিরপুর হাই স্কুল হয়ে কলেজ মোড় ও পরবর্তীতে মাছং ইউনিয়ন পরিষদের সামনের স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য একাধিক ব্রিজসহ রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকী কাজ সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ কাজ বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান তিনি।