এবার কোরবানীকে সামনে রেখে ছুরি, চাকু, ধামা, বঁটির ব্যবসা মন্দা

ইসলামিক কুমিল্লা চট্টগ্রাম পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

ভিডিওতে শুনুন ব্যবসায়ীদের কথা

সেলিম চৌধুরী হীরাঃ
কোরবানী ঘনিয়ে এলে জানা যায় দা, ছুরি, চাকু, ধামা, চাপাতিসহ অনেক নাম। একএকটির একেক রকম কাজ। কাজের সাথে মিল রেখে ছুরি নাম করন করা হয়েছে- জবাই ছুরি, ছিলা ছুরি, কোপ ছুরি, ধামা , আধা ধামা, চাপাতি, দা, কুড়াল, বঁটি ইত্যাদি৷
এ কথা ঠিক যে, ছুরি চাকুর খোঁজ করা ভদ্রলোকের কাজ নয়। কিন্তু কোরবানির ঈদ বলে কথা, দৃশ্যটা পুরো পুরি বদলে যায়৷ এরই মাঝে যারা কোরবানী দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা খোঁজ করছেন ‘দেশীয় এসব অস্ত্রের’!

গত বছর গুলোতে কেনা হয়েছিল, সেগুলোর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আর পাওয়া গেলেও, জংধরা, ধার কম তাই নতুন চাই। আরও ধারালো আরও চকচকে হলে ভাল। অনেকেই ছুটছেন বাজারে, দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ছুরি চাকু। আঙুল ঘষে ধার পরীক্ষা করছেন ক্রেতারা। তার পর কেনা। কিনতে হবে চাটাই, খাইট্যা। সব মিলিয়ে জোরে শোরেই চলতো প্রস্তুতি।

এমন দৃশ্য কোরবানী আসলেই দেখা যেতো। কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন৷ মহামারির কারোনায় পালটে দিয়েছে সব। ভাটা পড়েছে এমন সব কেনা কাটায়। পুরোপুরি পরিবর্তন এসেছে কামার শিল্পেও। কামার শিল্পিদের হাতেও তেমন কাজ নেই এ বছর! টুংটাং শব্দে তেমন মুখরিত হয়নি কামার পল্লী বা দোকানে৷ চিরাচরিত সেই হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দ এখন অনেকটা কম। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এবার অনেকেরই পশু কোরবানী দেয়ার সামর্থ নেই। ফলে ব্যস্ততাও নেই কামার শিল্পীদের মাঝে। এ বছর ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

দোকানীরা বলেন ক্রেতা চোখে পড়লো সামান্যই, অন্যান্য বছর এই সময় ক্রেতার ভিড়ে দিশেহারা হয়ে যেতাম৷ কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি খুব ভাল বলে মনে হলো না। এইবার তো দোকান ফাঁকা, দেখতেই পারছেন৷

গরু জবাই করা, মাংস কাটা কসাইয়ের কাজ। কিন্তু কোরবানি ঈদে অন্যরাও কসাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নিজের গরু নিজে জবাই করেন। মাংস কাটেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ছুরি চাকু চাপাতির মতো উপকরণগুলোর কোন বিকল্প নেই। সব দোকানেই রয়েছে বিশাল বিশাল ছুরি চাকু চাপাতি। দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন অলিগলিতে। বড় বড় দা বঁটি দু’ পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দেখে পিলে চমকে যায়, হাত-পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসে। তারপরও কিনতে হবে নিজের প্রয়োজনে।

দোকানে গিয়ে জানা যায়, কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রের মধ্যে প্রকারভেদে প্রতি পিস “জবাই ছুরি” ৪০০-৮০০ টাকা, “ছিলা ছুরি’ ৯০-১২০ টাকা, “মাঝারী ছুরি” ১২০-২০০ টাকা, “চাপাতি” ৫০০-৭০০ টাকা, “আধা ধামা” ৪০০-৬০০ টাকা, “কুড়াল” ২০০-৬০০ টাকা, “দা” ২০০-১২০০ টাকা, “বঁটি” ২০০-১০০০ টাকা দাম রাখা হয়েছে৷

কোরবানির ঈদে ছুরি চাপাতি ছাড়াও কেনাকাটা আছে। কোরবানির মাংস মেঝেতে রেখে কাটার জন্য চাটাইয়ের প্রয়োজন হয়। বাজারের কয়েকটি স্থানে হুগলা পাতার চাটাই বিছিয়ে রাখা আছে। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে৷ প্রতিটি চাটাই প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা দামে। পাশেই ‘ খাইট্যা ’ বা ‘চাকতি’। তেঁতুলগাছসহ অন্যান্য গাছের টুকরো কেটে তৈরি করা হয়েছে চাকতি। এর উপর পশুর হাঁড় রেখে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। এগুলো দাম দেয়া হয়েছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে ক্রেতা নেই এখানেও৷

লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার দা, ছুরি, বটি ব্যবসায়ী (কামার) অনিল কর্মকার জানান, এ বছর মহামারী করোনা কারনে ব্যবসা খুবই মন্দা যাচ্ছে। সারা বছর বসে থাকি কোরবানীর আশায়। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি৷ শুধুমাত্র বংশগত পরমপরা ধরে রাখার স্বার্থে এ ব্যবসা করে যাচ্ছি। তবে সেদিন বেশী দূরে নয়, আমাদের এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.